চট্টগ্রামে আরও তিনজনের করোনা শনাক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ১১:৫০ পিএম, ০২ মে ২০২০

চট্টগ্রামে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত দুই দিনে নতুন তিনটি উপজেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া গেছে আরও তিনজনের।

এ নিয়ে গত ৩৭ দিনে চট্টগ্রামে মোট ৭৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় শনাক্ত আরও ৫ জন চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে এখন চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা ৮১ জন।

শনিবার (২ মে) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজে (বিআইটিআইডি) হাসপাতালে ১৭৭টি ও চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) ল্যাবে ৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, বিআইটিআইডি ল্যাবে নতুন ১৭৭টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন ছয় ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ জন চট্টগ্রামের। এদের একজন সন্দ্বীপ উপজেলায়, একজন রাঙ্গুনিয়া ও একজন চন্দনাইশ উপজেলার বাসিন্দা। এর মধ্যে সন্দ্বীপ ও রাঙ্গুনিয়ায় প্রথমবারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হলো। এর আগে গতকাল নতুন করে লোহাগাড়া উপজেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ভাইরাসটা দ্রুতই ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র।

তিনি জানান, রাঙ্গুনিয়ায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক নারী। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।

বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) শাহরিয়ার কবির জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে শনাক্ত বাকি তিনজনের দুজন হাতিয়া উগজেলা ও একজন নোয়াখালী সদরের বাসিন্দা।

এদিকে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯০টি পরিক্ষায় লক্ষ্মীপুরের ৩ ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে।

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। চট্টগ্রামে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৩ এপ্রিল। নগরীর দামপাড়ায় ৬৭ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি তার ওমরাফেরত মেয়ের মাধ্যমে সংক্রমিত হন বলে ধারণা করা হয়। পরে ৫ এপ্রিল দ্বিতীয় করোনা রোগী শনাক্ত হন ওই ব্যক্তির ২৫ বছর বয়সী ছেলে।

গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হন তিনজন। একদিন বিরতি দিয়ে ১০ এপ্রিল বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে আরও দুজনে করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। এরপর ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনা রোগী শনাক্ত হন তিনজন। ১২ এপ্রিল চট্টগ্রামে সে সংখ্যা বেড়ে পাঁচজনে দাঁড়ায়। আক্রান্তদের একজন শিশু ওই দিন দিবাগত রাতে জেনারেল হাসপাতালে মারা যায়। এছাড়া ওই দিন প্রথমবারের মতো ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্যও করোনা আক্রান্ত হন।

১৩ এপ্রিল চট্টগ্রামে শনাক্ত হওয়া দুজনের একজন নারী করোনা শনাক্তের আগেই আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় মারা যান। ১৪ এপ্রিল সর্বোচ্চ ১১ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে চট্টগ্রামে। এর মধ্যে এক চিকিৎসক, সাতকানিয়ার পাঁচ যুবক ও নগরের সাগরিকা এলাকার এক পরিবারের চারজন করোনায় আক্রান্ত হন। এর পরের চারদিন ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮ এপ্রিল আক্রান্তের সংখ্যা কমে হয় যথাক্রমে ৫, ১, ১ ও ১ জনে।

তবে ১৯ এপ্রিল হঠাৎ আবারও চট্টগ্রামে বাড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। এদিন ৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এছাড়া পুরোনো এক রোগীর আবারও পজিটিভ আসে। ২১ এপ্রিল নতুন একজন করোনা শনাক্ত হওয়ায় জেলায় এতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ জনে। ২২ এপ্রিল নতুন ৩ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়ে। ২৪ এপ্রিল নগরের দামপাড়ায় আরও একজন রোগী শনাক্ত হয়।

২৫ এপ্রিল চট্টগ্রামে শনাক্ত হয় নতুন দুই রোগী, ২৬ এপ্রিল শনাক্ত হয় ৭ জন, ২৭ এপ্রিল ৯ জন, ২৮ এপ্রিল ৩ জন, ২৯ এপ্রিল এক পুলিশ সদস্যসহ ৪ জন, ৩০ এপ্রিল এক পুলিশ সদস্য, ১ মে এক সাবেক সেনা কর্মকর্তাসহ ৩ জন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। শনিবার নতুন করে তিনজনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৮১ জনে।

তাদের মধ্যে ঢাকা, কুমিল্লা, কক্সবাজার ও রাজবাড়ীতে করোনা শনাক্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফিল্ড হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পাঁচ ব্যক্তিও রয়েছেন।

এ নিয়ে চট্টগ্রামে এক শিশু, দুই বৃদ্ধ ও দুই নারীসহ মোট ছয়জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া আইসোলেশনে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ছয়জন। মৃত্যুর পর তাদের পাঁচজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ২০ জন। ৫৫ জন আইসোলেশনে ভর্তি আছেন।

আবু আজাদ/এমএসএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।