করোনা: বাংলাদেশকে রেলের চারটি রুট প্রস্তাব ভারতের

কূটনৈতিক প্রতিবেদক কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৪৯ পিএম, ০৫ মে ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় বন্ধই রয়েছে বলা চলে। পুনরায় সে সম্পর্ক সচল করতে পণ্য পরিবহনে দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান রেলের চারটি রুটকে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, করোভাইরাসের কারণে মার্চের শেষের দিকে সীমান্ত বন্ধসহ ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দু’দেশের মধ্যে সব যোগাযোগে বিধি-নিষেধ আরোপ করে দু’দেশই। পণ্য পরিবহন এ বিধি-নিষেধ বাইরে থাকলেও কাঙ্খিত অর্থে বিষয়টি কার্যকর হয়নি। তাই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সচল করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, গত সোমবার ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে বাংলাদেশের বাণিজ্য, পররাষ্ট্র ও রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ জাতীয় রাজস্ববোর্ড ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে করেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা ও বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন।

এতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া অনুবিভাগের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সারোয়ার মাহমুদ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান যোগ দেন। আর ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাসের নেতৃত্বে ভারতীয় কূটনৈতিকরা ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পেট্রাপোল- বেনাপোল, গেদে-দর্শনা, রোহানপুর-শিংহাবাদ এবং রাধিকাপুর-বিড়ল এ চারটি রেল সংযোগ বিদ্যমান রয়েছে। আর এ চারটি দিয়েই পণ্য পরিবহনের অনুমতি রয়েছে। ফলে দুই দেশের পণ্য পরিবহনে এ রুট চারটি ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়।

এতে করে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সম্বন্নিত চেকপোস্ট এবং স্থল বন্দরগুলোতে চাপ কমানোর বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছেন বৈঠকে যোগ দেয়া কর্মকর্তারা। রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করলে তা অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ের পাশাপাশি ব্যবহার বান্ধব ও দুই দেশের বাণিজ্যের জন্য নিরাপদ বলেও মত দেন তারা।

এর বাইরে এ পুরো প্রক্রিয়াতে মানুষ কম লাগবে, ফলে তা কোভিড-১৯ সংক্রমণের শঙ্কাও কম থাকবে। রেলওয়ের ছোট সুযোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ীরা জরুরি নিত্যপণ্য ছোট আকারে নিয়ে আসার সুবিধা পাবে বলে মত দেওয়া হয়।

বৈঠকে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস আশা প্রকাশ করেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণের এ সময়ে এই রেল সংযোগকে জরুরি নিত্যপণ্য পরিবহনে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা কাজে লাগাবে।

বৈঠকটি ফলপ্রসূ হয়েছে জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, কোভিড-১৯ সংক্রমণের কারণে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এ চ্যালেঞ্জ উত্তরণ করে উদ্ভাবনী কোনো সমাধান বের করা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সূত্র ধরে সরবরাহ ব্যবস্থা, পণ্যের চলাচলের সঙ্গে নিত্যপণ্যের আনা নেয়া, সমন্বিত চেকপোস্টে ও স্থল বন্দরগুলোতে বাণিজ্য সুবিধা, শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি বিনিয়োগ সহজীকরণ নিয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাস বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক চমৎকার। আর বাণিজ্যের বহুমুখিতা অংশীদারত্বের ভিত্তি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশিদার। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই দেশের বাণিজ্য ১০ দশমিক ২৫ বিলয়ন ছাড়িয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের সঙ্গেও ভারতের সরবরাহ ব্যবস্থায় বাধা এসেছে।

এজন্য ভারতীয় হাইকমিশানার সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রাখতে উদ্বাবনী ধারণ খুঁজে বের করার আহ্বান জানান বৈঠকে যোগ দেয়া বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের।

হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পুরো দেশজুড়েই রেলওয়ের বিস্তৃত সংযোগ রয়েছে। যার মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রফতানি সম্ভব। কোভিড-১৯ সংক্রমণ কালে ভারতে রেলওয়ে পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থার মেরুদন্ড হয়ে উঠেছে রেলওয়ে। ই-কমার্স, কৃষিখাত, ওষুধ শিল্প, কাঁচামাল সরবরাহকারীসহ বিভিন্ন খাতের বড় ব্যবসায়ীরা ভারতের রেলওয়ের সঙ্গে অংশীদারত্বে আরও শক্তিশালী করে গ্রাহকের কাছে দ্রুত সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

জেপি/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।