সার্ক কোভিড-১৯ জরুরি তহবিল : পরিচালনা নিয়ে মতানৈক্য সদস্যদের

জেসমিন পাপড়ি
জেসমিন পাপড়ি জেসমিন পাপড়ি , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৪৩ এএম, ০৬ মে ২০২০

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত সার্কের জরুরি তহবিল পরিচালনা নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ফান্ড পরিচালনার জন্য সার্ক সেক্রেটারিয়েটকে দায়িত্ব দেয়ার কথা বললেও এই ফান্ডের উদ্যোক্তা ভারত তাতে রাজি হয়নি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ভারতের উদ্যোগে নেয়া এ তহবিলের অর্থ কোন প্রক্রিয়ায় খরচ করা হবে তা নিয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। তবে তার আগেই ভারত এ তহবিল থেকে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সূত্র বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে তহবিলের কার্যক্রম শুরুর আগেই এই মতানৈক্য তৈরি হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা সার্ক (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) কোভিড-১৯ মহামারি ঘিরে কিছুটা সচল হলেও সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোর সম্পর্ককে আবারও জটিল করছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আলাপকালে বলছিলেন, বাংলাদেশসহ প্রায় সব সদস্য রাষ্ট্রই সার্কের প্লাটফর্মে তৈরি এই ফান্ডের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ সার্কের নিয়ন্ত্রণে রাখার পক্ষে। তবে ভারত এ বিষয়ে একমত না হওয়ায় সে বিষয়টিকেই বেশ জোরেসোরে প্রচার করছে পাকিস্তান।

কূটনীতিকরা মনে করেন, খুব সহজেই তৈরি হওয়া এই তহবিল ভারত কীভাবে কোন সদস্যরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছে, সে বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবুদল মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, “এই ফান্ডের অপারেশন কীভাবে হবে, টাকাটা কীভাবে ব্যবহৃত হবে, এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কোনো আলোচনা হয়নি। আলোচনা কবে শুরু হবে তাও জানি না। আমরা শুধু এই ফান্ডে টাকা দিয়েছি। আর কিছুই এখনও জানি না।”

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে গড়া এই ফান্ড কীভাবে চলবে সে আলোচনা শুরুর নেতৃত্বও নয়াদিল্লিকেই নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান একটা প্রস্তাব দিয়েছিল এই ফান্ড সার্কের তত্ত্বাবধানে পরিচালনা করার। তাদের প্রস্তাব ছিল, সার্ক সেক্রেটারিয়েটের মাধ্যমে কোভিড-১৯ জরুরি ফান্ড পরিচালনা হোক।’

‘কিন্তু ভারত সার্কের আন্ডারে দিতে এখনও রাজি হয়নি। যদিও পাকিস্তানিরা জোরেসোরে এই কথা বলে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

ড. মোমেন জানান, বাংলাদেশ এ বিষয়ে কোনো অবস্থান নেয়নি। তবে আমাদের অবজারবেশন হলো, সার্কের নতুন সেক্রেটারি যিনি আসছেন, সার্ক চার্টারের আওতায় তিনি এটার দেখভাল করতে পারেন।’

উল্লেখ্য, ভারতের উদ্যোগে গত ১৫ মার্চ সার্কের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান ছাড়া অন্য সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা এতে অংশ নেন। পাকিস্তানের পক্ষে দেশটির স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী এ ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।

বৈঠকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সার্কের সদস্য দেশগুলোর জন্য ‘কোভিড-১৯ জরুরি তহবিল’ গঠনের প্রস্তাব করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

সেইসঙ্গে এ তহবিলে শুরুতেই সবচেয়ে বেশি ১ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয় দিল্লি। এই তহবিলে ১৫ লাখ ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কা ৫ লাখ, আফগানিস্তান ১০, নেপাল ৮, মালদ্বীপ ২ ও ভুটান ১ লাখ ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। পরে পাকিস্তানও এই তহবিলে ৩০ লাখ ডলার দেয়ার ঘোষণা দেয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল সহায়তা সামগ্রীর দ্বিতীয় চালান বাংলাদেশে পাঠায় ভারত। তখন ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ নীতির অংশ হিসেবে এবং এই অঞ্চলের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী বাংলাদেশকে দেয়া হচ্ছে। এই সহায়তা এসেছে সার্ক কোভিড-১৯ জরুরি তহবিলের আওতায় এবং কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টায় সাহায্য করার উদ্দেশ্যে।

জানা গেছে, গত ২৩ এপ্রিল স্বাস্থ্যমন্ত্রী পর্যায়ের ভিডিও কনফারেন্সে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সার্ক সচিবালয়ের প্রস্তুতির কথা সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে জানান সংস্থাটির মহাসচিব। তার সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠকে এ ফান্ড নিয়ে মতানৈক্যের কথা জানান পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

পাকিস্তান জানায়, সার্ককে শক্তিশালী করার বদলে এ প্লাটফর্ম ব্যবহার করে একটি দেশ আঞ্চলিক এজেন্ডা নিজেদের চাহিদামতো নকশা অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে না। সার্ক সচিবালয়ের কাছে কোভিড-১৯ জরুরি তহবিলের নিয়ন্ত্রণ রাখার পাশাপাশি এর ব্যবহার ও বাস্তবায়ন সদস্য দেশগুলোর আলোচনার মাধ্যমে করার পক্ষে মত দেন তিনি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ এপ্রিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব সাংবাদিকদের জানান, সার্ক কোভিড-১৯ জরুরি তহবিল নিয়ে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন, ব্যবহারের উপায় এবং কোন প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করা হবে সে সিদ্ধান্ত সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নিতে হবে।

তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বর্তমানে বাস্তবায়নের অগ্রবর্তী অবস্থায় রয়েছে। সেবা ও সরঞ্জাম দিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ দেশগুলো এ তহবিলে দ্রুত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কোনো দেশের ঐকান্তিকতার মাত্রা তার ব্যবহার দ্বারা নির্ণয় করা যায়।

জেপি/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।