করোনায় ভাসমান মানসিক ভারসাম্যহীন বয়স্কদের দেখার কেউ নেই
দৃশ্যপট এক
সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে আসছে। একটু পরেই মাগরিবের নামাজের আজান পড়বে। রাস্তাঘাট মানবশূন্য। হাতেগোনা কিছু প্রাইভেটকার, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অ্যাম্বুলেন্স দ্রুতগতিতে ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যে। এ সময় রাজধানীর নীলক্ষেত-কাটাবন সড়কের পাশে ঢাকা সিটি করপোরেশনের বন্ধ মার্কেটের একটি দোকানের সামনে আনুমানিক ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ নিজে নিজেই বিড়বিড় করে কথা বলছিলেন। পরনে পুরনো ময়লা লুঙ্গি। কঙ্কালসার দেহ তার। দয়াপরবশ হয়ে একজন ভদ্রমহিলা তার হাতে ৫০ টাকার একটি নোট তুলে দেযন। কিন্তু টাকার দিকে খেয়াল নেই তার।
দৃশ্যপট দুই
হাইকোর্টের সামনে থেকে বঙ্গবাজার অভিমুখে রাস্তার পাশে বসে ছিলেন আনুমানিক ৭০-৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ। জীর্ণশীর্ণ দেহ, চুল-দাড়ি-গোঁফ সব পেকে গেছে। পরনে পুরনো লুঙ্গি ও একটি কটি। বৃদ্ধের সামনে প্লাস্টিকের একটি বাটিতে খাবার পড়ে আছে। বাটি খুলে কয়েক লোকমা খাবার মুখে দিতে দেখা যায় তাকে। তবে বয়সের ভারে খাবার মুখে তুলে খেতেও যেন কষ্ট হচ্ছিল তার।
দেশের করোনা মহামারির এই সংকটকালে গত দুইদিনে এ প্রতিবেদকের সামনে দৃশ্য দুটি ধরা পড়ে। বর্তমান করানো পরিস্থিতিতে নিজের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে যান্ত্রিক নগরী ঢাকা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে সরকারের নির্দেশনা মেনে বেশিরভাগ নগরবাসী খুব প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ। রাস্তাঘাটে সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করছে। ফলে নগরীর রাস্তাঘাট অধিকাংশ সময়ে মানবশূন্য হয়ে পড়ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সবচাইতে দুর্ভোগে রয়েছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ও বয়স্ক ভাসমান নারী-পুরুষরা। রাজধানীতে ভাসমানদের মধ্যে যারা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে সক্ষম তারা নগরীর বিভিন্ন রাস্তাঘাটে ঘুরে ত্রাণ সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারলেও মানসিক ভারসাম্যহীন ও অধিক বয়স্করা ত্রাণ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের জীবনধারণ করা দায় হয়ে পড়েছে। তাদের খুঁজে খুঁজে ত্রাণ বিতরণ করার কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দিন ও রাতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে এ ধরনের অসংখ্য মানসিক ভারসাম্যহীন ও বয়স্কদের কষ্টের জীবনযাপনের এ ধরনের খণ্ডিত কিছু চিত্র দেখতে পান।
রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে পলাশী অভিমুখী রাস্তায় বাম দিকের ফুটপাতে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক বৃদ্ধাকে প্রায়ই ঝিম মেরে একাকি বসে থাকতে দেখা যায়। কেউ তাকে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে চাইলেও তিনি নেন না। আনমনে বিড়বিড় করে কথা বলেন। আশপাশের ভাসমান লোকজন জানান, এই বুড়ির কেউ নেই। তারা মাঝে মাঝে খাবার জোগাড় করে খাওয়ালে খান, তা নাহলে না খেয়ে পড়ে থাকেন। এ পথে যাতায়াতকারী কয়েকজন পথচারী বললেন, এ ধরনের বৃদ্ধদের জন্য বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন।
এমইউ/এসআর/এমএস