করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু, বাবার মুখে সন্তানের শেষ আদর
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে বুধবার (২০ মে) সকালে মৃত্যু হয় কামাল নামের এক যুবকের। একেবারে শেষ মুহূর্তে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছিল তাকে। দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হলে নিজেদের গাড়িতে করেই মৃত কামালের শিশু সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। সেখানেই নিথর বাবার চেনা মুখে শেষবারের মতো আদর বুলিয়ে দেয় অবুঝ শিশু সন্তান।
নিষ্ঠুর এমন দৃশ্য উঠে এসেছে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাসে।
শুক্রবার (২২ মে) সকালে নিজের ফেসবুক পেজে সেই বেদনাবিধুর ঘটনার একটি ভিডিও প্রকাশ করেন ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘গত ২০ মে ২০২০, ৪০ বছরের রোগী জীবনের শেষ মুহূর্তে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন আমাদের চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালে। রোগীকে প্রথম দেখায় বুঝতে পেরেছিলাম জীবনের সময় বেশি নেই। তবু চেষ্টা করেছিলাম, আমাদের সামর্থ্য দিয়ে রোগীকে বাঁচাতে। রোগীর অভিভাবকও বুঝতে পেরেছিল রোগীর পরিণতি।’
‘করোনা পরীক্ষা হয়নি, কিন্তু সকল লক্ষণ করোনাভাইরাস জনিত। অবশেষে মারাও গেলেন সাড়ে ১৩ ঘণ্টা পর। রোগীর অভিভাবক হিসেবে সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী। স্ত্রী-কে জিজ্ঞেস করতেই বললেন, তাদের ৭ বছরের সন্তান আছে। সাধারণত করোনা জনিত লক্ষণে মারা গেলে সিভিল সার্জন অফিসে জানাতে হয়। পরে সিভিল সার্জন নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় দ্রুত দাফন করা হয়। কিন্তু আত্মীয় স্বজন কেউ মৃত ব্যক্তিকে দেখার সুযোগ হয় না। আমি মৃত রোগীর অভিভাবক স্ত্রীকে বললাম, আপনাদের সন্তানকে তার বাবাকে দেখবে না? উত্তরে বলল, বাসায় কেউ নাই, আর কিভাবে আসবে।’
‘পরে সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ নিয়ে গেলে সন্তান বাবাকে দেখতে পারবে না। আমি বললাম, আপনি বাসায় গিয়ে আপনাদের সন্তানকে নিয়ে আসেন আমাদের হাসপাতালের গাড়ি নিয়ে। তাই হলো, মা সন্তানকে আমাদের গাড়িতে করে নিয়ে আসল।’
সন্তান আসার পরই উঠে এসেছে সেই করুণ দৃশ্য। শেষবারের মতো বাবাকে আলিঙ্গন করলেন সন্তান।
ভিডিওতে দেখা যায়, ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া করোনায় প্রাণ হারানো কামালের একমাত্র সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় শিশুটি মৃত বাবার মুখমণ্ডলে শেষবারের মতো হাত বুলিয়ে দিল।
এ বিষয়ে ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে করোনা উপসর্গ নিয়ে কামাল নামের এক যুবককে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। তবে কন্ডিশন খুব খারাপ ছিল। পরিবারে সদস্যরাও জানত তাকে হয়তো আর বাঁচানো যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘এ এক বেদনাবিধুর বাস্তবতা। আমি চাইছিলাম, অবুঝ শিশুটি তার বাবাকে একবার অন্তত দেখুক, এ যে শেষ দেখা। আমাদের চারপাশে এখন এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটছে, কিন্তু এই সমাজ যেন দেখেও দেখছে না!’
আবু আজাদ/এফআর/জেআইএম