করোনাকালের সাহসী যোদ্ধা ডা. অনুপ
নিজের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে, বয়স্ক বাবা-মা দুশ্চিন্তায় থাকে- এসব জেনেও মানুষের কথা চিন্তা করে করোনাভাইরাসের দুর্যোগপূর্ণ এ সময়ে থেমে না থেকে শুরু থেকেই দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন করোনাযোদ্ধা নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (৫০ শয্যা বিশিষ্ট) মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও করোনা কন্ট্রোল কর্নারের ফোকাল পারসন ডা. হরগোবিন্দ সরকার অনুপ।
একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বাবা-মায়ের যথেষ্ট বয়স হয়েছে। আমি জানি তারা সারাক্ষণ আমাকে নিযে দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবুও থেমে না থেকে মানুষের সেবা করতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি।
শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১৫২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ জন, মারা গেছেন ২ জন।
চলমান পরিস্থিতিতে নিজের কাজের বর্ণনা দিয়ে ডা. অনুপ বলেন, চলছে প্রচণ্ড রোদ, তীব্র গরমের দাবদাহ ও ঝড়-বৃষ্টি। এরমধ্যেই চলছে আমাদের করোনার সঙ্গে লড়াই। আমরা আছি চন্দ্র অভিযানের স্যুট (পিপিই) পড়ে। গরমে ঘামে কাপড় একদম ভিজে যায়। নিঃশ্বাসের বাষ্পে গগ্লসের ভেতরটা চোখ ঝাপসা হয়ে যায়, মাস্কে দম আটকে আসে। তার মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত মা-বাবাসহ পরিবারের সবাই আমাকে নিয়ে থাকে দুশ্চিন্তায়। তবুও থেমে না থেকে কাজ করে যাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন। ছুটে বেড়াই নবাবগঞ্জের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্তে, এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়নে।
শুধু চাকরি নয়, মানবিক কারণে এভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।বললেন, মাঝে মধ্যে ক্লান্তি এলেও পিছু না হটে নিজেকে করোনাযুদ্ধের প্রহরী মনে করে আবার সামনে এগিয়ে যাই। মহান সৃষ্টিকর্তার দয়ায় এবং জনগণের আশীর্বাদ ও দোয়ায় যতদিন সুস্থ থাকবো দেশ ও জনগণের জন্য আমার এ লড়াই অব্যাহত থাকবে।
ডা. অনুপ আরও বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শহিদুল ইসলাম স্যারের নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় নবাবগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগ দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে। করোনা মহামারিতে আমাদের হাসপাতালের প্রত্যেকেই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। চিকিৎসক, নার্স, স্যাকমো, স্বাস্থ্য ও স্যানিটারি পরিদর্শক, ল্যাব টেকনোলজিস্ট, স্বাস্থ্য সহকারী, সিএইচসিপি, ড্রাইভার সকলে মিলে কাজ করে যাচ্ছি।
এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ সরব ডা. অনুপ। সেখানে নিয়মিত উপজেলার করোনা পরিস্থিতির আপডেট, এ রোগ বিষয়ক তথ্য, পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। একইসঙ্গে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে টেলিমেডিসিন সেবাও দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
মানুষের বিপদের সময়ে ছেলের এভাবে এগিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে অনুপের বাবা হরিদাস সরকার বলেন, ছেলেকে নিয়ে প্রতিনিয়ত দুশ্চিন্তায় থাকলেও দেশের এই ক্রান্তি লগ্নে আমার ছেলে যে ভূমিকা রেখেছে, তাতে বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।
মা প্রাণ তুলশী সরকার বলেন, ছেলের জন্য সব সময় চিন্তা হয়। তারপরও ভালো লাগে এ ভেবে যে আমার সন্তানের জন্য দেশ ও জনগণ উপকৃত হচ্ছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আসাদ, সুমাইয়া, উল্লাস, জুয়েল ও মাহফুজা বেগমসহ আরও বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষ ও টেলিমেডিসিন সেবাগ্রহণকারী জানান, হরগোবিন্দ সরকার অনুপ শুধু একজন ডাক্তার নন, তিনি মানবতার বন্ধু।
আসাদুজ্জামান সুমন/এনএফ/এমএস