করোনাকালে কমিউনিটি সেন্টার এখন রোগমুক্তির শয্যা
বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে বদলে গেছে অনেক কিছুই। অনেকেই তাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে দিয়েছেন করোনা হাসপাতাল গড়তে। কোথাও স্টেডিয়াম রূপান্তরিত হয়েছে হাসপাতালে। রাজধানী ঢাকায় কমিউনিটি সেন্টারও এখন হয়ে গেছে রোগমুক্তির শয্যা।
রাজধানীর পল্টনের সুপরিচিত আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টার এখন ব্যবহৃত হচ্ছে করোনা রোগীর চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে। এছাড়া বসুন্ধরা কমিউনিটি সেন্টারও করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হচ্ছে।
করোনা আক্রান্ত পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সদস্যদের চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে এ দুটি কমিউনিটি সেন্টারে অস্থায়ীভাবে গড়া হাসপাতাল। করোনার চিকিৎসার পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ স্থাপন করা হয়েছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম।
র্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনায় সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের পরেই লড়ছে পুলিশ। করোনায় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন নিশ্চিতে স্বতন্ত্র বাহিনী হিসেবে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।তবে পুলিশেরই এলিটফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
তবে আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ না করলেও এ ব্যাপারে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার জাগো নিউজকে বলেন, সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ব্যাপক প্রস্তুতি থাকায় বাহিনীতে করোনা সংক্রমণ তুলনামূলক কম। মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। আরও স্বস্তির কথা হচ্ছে এই মহামারিতে আমাদের কোনো সদস্যকে হারাতে হয়নি।
র্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত র্যাবে কর্মরত সদস্যদের জন্য একাধিক স্থানে চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। র্যাব ফোর্সেসের আক্রান্ত রোগীদের সিএমএইচ এবং পুলিশ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
র্যাব কর্তৃক নিজস্ব ব্যবস্থপনায় হলি ফ্যামিলি, রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ছাড়াও রাজধানীর পুরানা পল্টনের আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টার এবং বসুন্ধরা কমিউনিটি সেন্টার করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করছে।
র্যাব সদস্যদের চিকিৎসায় মেডিকেল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ল্যাব সহকারী নিয়োগ, আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে আর্মির অবসরপ্রাপ্ত মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং বিভিন্ন নার্সিং স্কুল থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
চিকিৎসা সামগ্রী হিসেবে ২২টি অক্সিজেন কনসেনটির ও ২২টি ভেন্টিলেটর সংযোজন করা হয়েছে। এ অক্সিজেন কনসেনটর বায়ু মণ্ডলের বাতাস হতে অক্সিজেন গ্রহণ করে তাই সিলিন্ডারের প্রয়োজন নেই। এছাড়া পালস অক্সিমিটার, ইসিজি, নেবুলাইজার, থারমাল স্ক্যানার ও ডিজিটাল বিপি মেশিন সংযোজিত হয়েছে। প্রত্যেক রোগীর বেড সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে ডাক্তার তার মোবাইল থেকে রোগীদের পর্যবেক্ষণ এবং কথা বলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবার বিছানার পাশে ইলেকট্রিক কেটলি, গরম পানি, গরম চা আদা কালোজিরা ইত্যাদি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত সদস্যদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য ‘র্যাব করোনা আপডেট’ নামে একটি অ্যাপস উদ্বোধন করা হয়েছে। সেই অ্যাপসের মাধ্যমে রোগীর সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর ও হালনাগাদ তথ্য জানা যাচ্ছে। এ ছাড়া আইপি ক্যামেরার মাধ্যমে চিকিৎসাকেন্দ্রে রোগীর অবস্থা সরাসরি মনিটরিং করছেন র্যাব মহাপরিচালক, গোয়েন্দা শাখার প্রধান, ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক।
এতে কোনো রোগীর কোনো জটিলতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক জরুরি চিকিৎসা সহায়তার উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রয়োজনে জরুরি মেডিকেল ইভাকুয়েশন বা র্যাবের চেইন অব ইকুয়েশনের জন্য প্রয়োজনে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে।
করোনা চিকিৎসার সব রকমের ব্যবস্থা রেখে নিজস্ব হেলিকপ্টারে ঘণ্টার মধ্যেই দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ক্রিটিক্যাল রোগীদের ঢাকায় নেয়ার ব্যবস্থাও করেছে র্যাব।
জেইউ/এএইচ/জেআইএম