আইভারমেকটিন-ডক্সিসাইক্লিন নিয়ে দেশে গবেষণা শুরু
কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক বা পরজীবীনাশক ওষুধ আইভারমেকটিনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে গবেষণা শুরু করেছে আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)।
ডাবল-ব্লাইন্ড প্লাসিবো নিয়ন্ত্রিত দৈবচয়নভিত্তিক পরীক্ষামূলক এ গবেষণা শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রাপ্তবয়স্ক রোগীদের নিয়ে গবেষণাটি পরিচালনা করা হবে। আইভারমেকটিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি ওষুধ যা ১৯৮০ সাল থেকে পরজীবীজনিত সংক্রমণ প্রশমনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছেন। কোভিড-১৯ পরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৬৫ বছর বয়সী আগ্রহী রোগীদেরকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। যারা মৃদু অসুস্থ এবং সাত দিনের কম সময়ব্যাপী অসুস্থতায় ভুগছেন এমন রোগীদেরকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অ্যালার্জি, হৃদরোগ, কিডনি এবং লিভারের সমস্যা আছে এবং গর্ভবতী বা বুকের দুধ খাওয়ান এমন মহিলাদেরকে এই গবেষণার আওতায় রাখা হবে না। গবেষণার আওতাভুক্ত একটি দলের রোগীরা এক ডোজ আইভারমেকটিনের সঙ্গে পাঁচ দিনব্যাপী ডক্সিসাইক্লিন পাবেন, অপর একটি দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন শুধু একটি করে আইভারমেকটিন পাবেন এবং তৃতীয় দল পাঁচ দিনব্যাপী প্রতিদিন একটি করে প্লাসিবো পাবেন। পরীক্ষার ওষুধ ও প্লাসিবোগুলো একইভাবে প্যাকেজ করা হবে এবং গবেষণাধীন ব্যক্তি ও চিকিৎসকরা কেউ জানবেন না কোন রোগী কোন চিকিৎসা পাচ্ছেন।
অতীতে দেখা গেছে যে, গবেষণাগারে অনেক ধরনের ভাইরাসনাশক হিসেবেও এটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিল। এই গবেষণায় কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় নিয়োজিত ঢাকার চারটি হাসপাতালের ৭২ জন রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গবেষণাটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সঙ্গে শুরু হয়েছে এবং বাকি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের হার, এর সঙ্গে সম্পর্কিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুর হার নজিরবিহীন। বিশ্বব্যাপী ৮২ লাখেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং গত পাঁচ মাসে প্রায় ৪ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই ৯৮ হাজার ৪৮৯ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং এক হাজার ৩০৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে সংক্রমণ সাধারণত হালকা (কাশি, জ্বর) থেকে তীব্র (নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট) শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত অসুস্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বয়োবৃদ্ধ এবং যাদের অন্য কোনো গুরুতর অসুস্থতা রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এ রোগ মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই গবেষণার লক্ষ্য হলো- আইভারমেকটিনের সঙ্গে ডক্সিসাইক্লিন অথবা শুধু আইভারমেকটিনের সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করলে ভাইরাসের সংক্রমণ কমার হার এবং জ্বর ও কাশি কমতে কয়দিন লাগে সে সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। এছাড়াও এই গবেষণায় অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার পরিবর্তন, অক্সিজেন দেয়া সত্ত্বেও রোগী কেন ৮৮ শতাংশের বেশি অক্সিজেন স্যাচুরেশন (এসপিও২)
ধরে রাখতে পারে না, রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ ও হাসপাতালে ভর্তি থাকার দিনের সংখ্যায় অবস্থার পরিবর্তন এবং এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করা।
আইসিডিডিআর,বি-র আন্ত্রিক এবং শ্বাসপ্রশ্বাস রোগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসা বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণার প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ড. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, ‘এই ভাইরাসের দ্রুত বিস্তারের কারণে আমাদের প্রয়োজন সার্স-সিওভি-২ এর বিরুদ্ধে কার্যকর একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খুঁজে বের করা। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কাছে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা করার মতো কোনো ওষুধ নেই এবং এ ধরণের ওষুধ আবিষ্কার হতে কয়েক দশক লেগে যেতে পারে। তাই আমাদের এমন ওষুধ খুঁজে বের করা প্রয়োজন যা বাজারে সহজলভ্য, যার ওপর যথেষ্টভাবে গবেষণা করা হয়েছে, যার পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া কম এবং যা জীবন বাঁচাতে সক্ষম।’
আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক জন ডি ক্লেমেন্স দেশের একটি স্বনামধন্য ওষুধ কোম্পানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন কতটা নিরাপদ ও কার্যকর তা জানার লক্ষ্যে আমাদের এই প্রচেষ্টায় সহায়তা করার জন্য আমি বেক্সিমকো ফার্মাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশসহ নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজে ব্যবহারযোগ্য চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে আইভারমেকটিনের প্রথম র্যান্ডমাইজড, সুপরিকল্পিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে সহায়তা করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এই গবেষণাসহ অন্যান্য দেশে চলমান গবেষণার ফলাফল ইতিবাচক হলে কোভিড-১৯ মহামারির জন্য আইভারমেকটিন একটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যের ও সহজে প্রাপ্য সমাধান হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে।’
এমইউ/এফআর/পিআর