‘মাস্ক পইরা এই গরমে রিকশা চালাইতে দম বন্ধ হইয়া আসে’
দুপুর ১টা। রাজধানী হাইকোর্টের সামনে রাস্তার পাশে রিকশা থামিয়ে ফুটপাতে বসে পড়লেন মধ্য বয়সী রিকশা চালক হারিছ মিয়া। রিকশার হ্যান্ডেলে একটি সার্জিক্যাল মাস্ক ঝুলে থাকলেও তার মুখে নেই। বারবার গামছা দিয়ে ঘাম মুছছেন তিনি।
করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন কিনা এবং মাস্ক কেন পরেননি এমন প্রশ্নে হারিছ মিয়া বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার সরকারি নির্দেশনা সম্পর্কে জানি। গরিব কন আর বড়লোক কন, সবাই চায় বাঁচতে। কেউ মরতে চায় না। আমিও মরতে চাই না। কিন্তু যা গরম শুরু হয়েছে, মুখে মাস্ক দিয়ে রিকশা চালাইতে দম বন্ধ হইয়া আসে, এ কারণে মাস্ক খুলে রাখছি।’
শুধু রিকশা চালক হারিছ মিয়াই নন, রাজধানীর নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশাজীবী বিশেষ করে যারা কায়িক শ্রমের পেশায় জড়িত তাদের অধিকাংশই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অবহিত থাকলেও সব সময় মাস্ক ব্যবহার করে থাকতে পারছেন না। এছাড়া গত দু-তিনদিন ধরে গরম বেশি হওয়ায় মাস্ক ব্যবহারে অনভ্যস্ত এসব মানুষ ইচ্ছা করলেও তা পরিধান করে কাজ করতে পারছেন না।
বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) দুপুর ১২টায় রাজধানীতে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের বিভিন্ন পেশায় (রিকশা, ঠেলাগাড়ি, ভ্যান চালক, দিনমজুর) জড়িতরা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে করণীয় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে জানলেও প্রচণ্ড গরমের কারণে মুখে মাস্ক দিয়ে থাকতে পারছেন না। তাদের অধিকাংশই ব্যবহারবিধি সম্পর্কেও সঠিকভাবে জানেন না। কখনো মুখ থেকে মাস্ক খুলে গলায় ঝুলিয়ে রাখছেন আবার কখনোবা শার্ট কিংবা গেঞ্জির পকেটে গুঁজে রাখছেন।
এদিকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু দিন দিন বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমণের কবল থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে (মুখে মাস্ক, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল এবং ঘন ঘন সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা) নির্দেশ দিলেও অনেকেই তা মানছেন না। করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে প্রায় সবার কাছে মাস্ক থাকলেও সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের অদূরে এক রিকশাচালককে কেন মাস্ক পরেননি এমন প্রশ্ন করলে বলেন, ‘এই যে মাস্ক আছে তো, গরমে কাহিল হইয়া এক কাপ চা খেতে বসছি মাত্র, সব সময় এটা পরে থাকতে ভালো লাগে না’ বলে জানান তিনি।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) পর্যন্ত রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ জনে।
এমইউ/এএইচ/জেআইএম