চট্টগ্রামে নকল স্যানিটাইজার তৈরির মূলহোতা আটক, দোকান সিলগালা
চট্টগ্রামে নকল স্যানিটাইজার তৈরির মূলহোতা ও অনুমোদনহীন রাসায়নিক সরবরাহকারী মানিক ঘোষকে (৩৫) আটক করেছে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে গেছেন এ কাজে তার সহযোগী জমজম কেমিক্যালের মালিক মনসুর আলী।
শনিবার (১১ জুলাই) দুপুরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মানিক ঘোষকে আটক করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক। তাকে সহায়তা করে এনএসআই নগর গোয়েন্দা শাখা ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে অলি-গলি থেকে নামিদামি ফার্মেসি, সব খানেই প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছিল অনুমোদনহীন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সাসল। গত তিন মাসে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ নকল সুরক্ষাসামগ্রীও। তবে এবার অনুমোদনহীন হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির মূল কাঁচামাল সরবরাহকারীকে ধরতে সমর্থ হয়েছে জেলা প্রশাসন পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানে নগরের জেল রোডের মানিক এন্টারপ্রাইজ ও জমজম কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি নামক দুটি রাসায়নিক বিক্রির প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হয়।
অভিযানের বিষয়ে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, অনুমোদনহীন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হেক্সাসল তৈরির মূলহোতাকে ধরতে নগরের জেল রোডের মানিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মানিক ঘোষ ও জমজম কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারির মালিক মনসুর আলীর বিষয়ে তথ্য পায় এনএসআই ও জেলা প্রশাসন। পরে ক্রেতা সেজে জমজম কেমিক্যাল থেকে ৮০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। দোকান মালিক মনসুর আলীর কথামতো অগ্রিম টাকা দিয়ে ৮০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজারের অর্ডারও দেয়া হয়। কিন্তু সরবরাহ করতে গেলেই গড়িমসি করতে থাকেন।
‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ নিতে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বা কারখানায় আমাদের গোয়েন্দা দলকে আসতে নিরুৎসাহিত করতে থাকেন। পরে জানায় তিনি ৮০ লিটার স্যানিটাইজার দেবেন তার বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট জায়গায় বা আমাদের ঠিকানায়। চুক্তি অনুযায়ী আজ দুপুরে হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা হয় মানিক এন্টারপ্রাইজের মালিক মানিক ঘোষকে। অন্যদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের খবর পেয়ে জমজম কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারির মালিক দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান।’
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক বলেন, আটক মানিক ঘোষ ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে স্বীকার করেন তিনি জমজম কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারির কাছে অবৈধভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির কাঁচামাল স্পিরিট ও মিথানল বিক্রি করেন এবং বিক্রিতে সহায়তা করেন। এছাড়া নিজেও খোলাবাজারে এসব বিক্রি করেন।
‘মানিক ঘোষ ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে স্বীকার করেন, তিনি কারখানায় তৈরি নকল সুরক্ষাসামগ্রী ও কাঁচামাল বিভিন্ন পন্থায় বিক্রি করে আসছেন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তিনি অর্ডার সংগ্রহ করেন ও নির্দিষ্ট জায়গায় সরবরাহ করেন। তিনি বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ট্রাকের মাধ্যমে ড্রামভর্তি স্যানিটাইজার ও কেমিক্যাল সরবরাহ করেন।’ বলেন ওমর ফারুক।
নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি, বিক্রি ও মানুষের সাথে প্রতারণার দায়ে মানিক ঘোষকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়াও জমজম কেমিক্যাল ও পারফিউমারির মালিক মনসুর আলী ভ্রাম্যমাণ আদালতের খবর পেয়ে দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যাওয়ায় দোকানটি সিলগালা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, আগামীতে এসব কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর লাইসেন্স যাচাইয়ের পাশাপাশি আরও কোথায় কোথায় অবৈধভাবে রাসায়নিক সরবরাহ করা হয় তা খতিয়ে দেখতে জেলা প্রশাসনে অভিযানে নামবে। এছাড়াও মানিক ঘোষদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা পরিচালনার সিদ্ধান্তও আসছে।
আবু আজাদ/বিএ/জেআইএম