স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের ধরতে ‘গণতদন্ত কমিটি’ গঠনের ঘোষণা
স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা করোনা মহামারিকে আরও বেশি ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী করে তুলেছে বলে অভিযোগ করেন ‘জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ’র আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনা এবং এ খাতের দুর্নীতিবাজদের অপসারণ ও বিচারের দাবিতে শনিবার (৮ আগস্ট) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মানববন্ধনে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও করোনা টেস্ট নিয়ে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টিকারী এবং নকল মাস্ক সরবরাহের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিতের জন্য একটি ‘গণতদন্ত কমিটি’ গঠনেরও ঘোষণা দেয়া হয়।
‘জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ’ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। মূল বক্তব্য তুলে ধরেন পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও জনস্বাস্থ্য গবেষক ডা. শামীম তালুকদার। এটি পরিচালনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভির আবির।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের করোনাভাইরাস মহামারি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় বয়ে এনেছে। এই বিপর্যয়কে আরও প্রাণঘাতী করে তুলেছে স্বাস্থ্য খাতের সীমাহীন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা।’
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনার কারণে প্রাণ হারাচ্ছেন অসংখ্য মানুষ, লঙ্ঘিত হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এবং স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ খুব কমই ফলপ্রসূ হচ্ছে এই অব্যবস্থাপনার কারণে। কেবল স্বাস্থ্য খাতেই নয়, এ অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে দেশের প্রায় সব জাতীয় খাতে। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমেই বাংলাদেশের সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতসহ দেশের সব জাতীয় খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করার জন্য কাজ করবে জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ।’
‘জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ’ গঠনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষক ডা. শামীম তালুকদার বলেন, ‘দেশে করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের নামে অনৈতিক বাণিজ্যের যে চর্চা চলে আসছে এবং এর ফলস্বরূপ যে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হয়েছে, জনগণ মনে করে, এটিই স্বাস্থ্য খাতকে অস্থিতিশীল করে তোলার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে। জনগণ এও মনে করে যে, সাম্প্রতিককালে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া স্বাস্থ্য-ব্যবসায়ীদের সঠিক বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যেমন হওয়া দরকার, ঠিক তেমনিভাবে দরকার সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তন। এজন্য ধারাবাহিক প্রচেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের এই আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করি। আমরা চাই, বাংলাদেশের জাতীয় সেবা খাতসমূহ গড়ে উঠুক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে। এই উদ্দেশ্যেই আমরা জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ গঠন করেছি। জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে রিস্ক কমিউনিকেশন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য প্রভৃতি জাতীয় খাতের ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কাজ করবে।’
মানববন্ধনে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও করোনা টেস্ট নিয়ে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টিকারী এবং নকল মাস্ক সরবরাহের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করার জন্য একটি ‘গণতদন্ত কমিটি’ গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। জাতীয় ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে আগামী ১৬ আগস্ট গণতদন্ত কমিটির বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে ঘোষণা দেয়া হবে বলেও মানববন্ধন থেকে জানানো হয়।
এমএআর/জেআইএম