গোমড়া আকাশে সোনারোদ, প্রাণ পেল বিনোদনকেন্দ্র
প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গোমড়া আকাশ। কখনও মুষলধারে, কখনও ঝিরঝির বৃষ্টি। এরই মাঝে গতকাল শনিবার দীর্ঘ পাঁচ মাস পর চট্টগ্রামের বেশকিছু বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেয়া হয়। কিন্তু দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য। আজ রোববার দুপুর গড়াতেই বন্দরনগরীর আকাশে ধরা দেয় সোনারোদ। সোনারোদের মিষ্টি আলো দীর্ঘ অবসাদ ভেঙে নগরবাসীর মাঝে এনে দিয়েছে খোশ আমেজ।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত ১৯ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল নগরবাসীর অন্যতম প্রধান বিনোদনকেন্দ্র চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর রোববার প্রথমদিনে দর্শনার্থীদের বেশ সাড়া মিলেছে সেখানে।
চিড়িয়াখানা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘চিড়িয়াখানা খোলার প্রথমদিনে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেশ ভালো। বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৬০০ দর্শনার্থী টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করেন। দিন যত যাবে দর্শনার্থীর উপস্থিতিও তত বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আজ (রোববার) সকাল থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় চিড়িয়াখানা। টিকিট দেয়ার সময় দর্শনার্থীদের মুখে মাস্ক আছে কিনা, তা যাচাই করা হয়। তারপর টিকিট দেয়া হয়। চিড়িয়াখানায় প্রবেশের সময় থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শরীরের তাপমাত্রাও মাপা হয়।’
দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধানসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৫টি নির্দেশনা দেয়া হয়। সেগুলো হলো- পার্কের প্রবেশপথে জীবাণুমুক্তকরণ টানেল স্থাপন, থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা, পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, প্রবেশপথে নিরাপদ শারীরিক দূরত্বের জন্য এক মিটার পরপর মার্কিং লাইন করা, পার্কে ময়লা ফেলার পাত্র, স্যানিটাইজার অথবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা।
করোনার সংক্রমণ শুরুর পর গত ১৯ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। গত ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলা করোনাভাইরাস বিষয়ক সমন্বয় কমিটির সভায় দর্শনার্থীদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধানসহ ১৫টি নির্দেশনা দিয়ে শনিবার থেকে বিনোদনকেন্দ্র খোলার অনুমতি দেয়া হয়। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পরিচালিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা খুলেছে রোববার।
এদিকে দুপুরের পর থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতির খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা মোনায়েম হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার শুরুর দিকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। শুধু স্থানীয়রা অল্পসল্প জড়ো হতেন সৈকতে। তবে কোরবানি ঈদের পর পতেঙ্গায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি বেশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবহাওয়া খারাপ থাকায় গত কয়েকদিন সৈকতে ভিড় ছিল কম। আজ রোদ ওঠায় দুপুরের পর থেকে চাপ বেড়েছে। সন্ধ্যায় আগের রূপে ফিরে এসেছে সৈকত।’
একইভাবে দর্শনার্থীর চাপ বেড়েছে আনোয়ারার পার্ক, কাট্টলী ও সীতাকুণ্ডের গুটিয়াখালী সমুদ্র সৈকতেও।
ফয়’স লেকের অপারেশনাল ম্যানেজার মঈন উদ্দীন সাজ্জাদ জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শনিবার থেকে ফয়’স লেক ও সি ওয়ার্ল্ড দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। প্রথমদিন সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় তেমন একটা দর্শনার্থী মেলেনি। আজ (রোববার) প্রায় ৩০০ দর্শনার্থী ফয়’স লেকে আসেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি এখানে মানা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
কাজীর দেউড়ি শিশু পার্কের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, শনিবার পার্ক খুললেও সারাদিন বৃষ্টির কারণে দর্শনার্থীদের তেমন উপস্থিতি ছিল না। আগে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ পার্কে আসতেন। এখন করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য অনেকে জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন। রোববার অবস্থার একটু পরিবর্তন হয়েছে। শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা এখানে আসা শুরু করেছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে।
আবু আজাদ/এমএআর/এমএস