করোনায় নিষ্প্রাণ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, দখলে নিল পাতি নেতা!
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মার্কেট দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ প্রায় একবছর ধরে নিষ্প্রাণ হাটহাজারী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। উপজেলা প্রশাসনও ব্যস্ত মহামারি মোকাবিলায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে। এই সুযোগে বরাদ্দ ছাড়াই উপজেলা প্রশাসনের তালা ভেঙে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের চার-চারটি দোকান নিজের দখলে নেয় অভিযুক্ত ওমর ফারুক।
এর মধ্যে একটি দোকান তিনি নিজের ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করছেন। অপর একটিতে স্টুডিও ও বাকি দুটি মুদি দোকান হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন এই পাতি নেতা। অভিযুক্ত ওমর ফারুক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ইউনুস গনি চৌধুরীর অনুসারী বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আলম বলেন, ‘আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই উপহার দিয়েছেন; আর সেটা যদি কেউ এভাবে দখল নেয় তাহলে কি বলবো সে ভাষা কি আছে? আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এ সময় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কমপ্লেক্সের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা উদ্যানও দখল করার অভিযোগ তোলেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার।
নিষ্প্রাণ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দখল নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে আলিশান অফিস
এদিকে খবর পেয়েই রোববার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে সেখানে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মার্কেটের দখল হয়ে যাওয়া চারটি দোকান উদ্ধারের পাশাপাশি আটক করা হয় সেই দখলদার ওমর ফারুককে।
হাটহাজারী উপজেলার ১১ মাইল এলাকায় এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন।
রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ এগারো মাস ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যাচ্ছেন না। কমপ্লেক্সের নিচ তলায় ১৪টি দোকান রয়েছে; যার ৭টি এখনো ভাড়া দেয়া হয়নি। মূলত এসব দোকানের ভাড়া দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচ ও দান-অনুদান পরিচালিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে ওমর ফারুক নামে এক ব্যক্তি চারটি দোকান অবৈধভাবে নিজের দখলে নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের তালা ভেঙে শুধু দোকান দখলে নিয়েই তিনি সন্তুষ্ট হননি। এর মধ্যে একটি দোকানে নিজের জন্য গড়ে তুলেছেন আলিশান অফিসও। বাকি একটিতে স্টুডিও এবং বাকি দুটি স্টোর হিসেবে ব্যবহার করছেন। উপজেলা থেকে একটু দূরে হওয়ায় ও করোনাকালে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে এভাবেই দখল করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার।’
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা
‘জানতে পেরে আজ দুপুরে অভিযান চালিয়ে ওই চারটি দোকান উদ্ধার করা হয়েছে; পাশাপাশি আটক করা হয়েছে ওই দখলদার ওমর ফারুককে। এখন আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’- বলেন নির্বাহী অফিসার।
এমন ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করে নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার প্রতিটি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সেরা উপহার। কিন্তু দেশের সেই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের দেয়া কমপ্লেক্সের দোকান দখল করার ঘটনা ঘটছে আজ! এ ঘটনায় আমরা হতাশ; এমন ঘটনাও দেখতে হলো! দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার দখল করা এটা মেনে নেয়া যায় না। ইতোমধ্যে দোকানগুলো বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। অনেকেই আবেদন করেছেন সময় করে মুক্তিযোদ্ধারা বসে আলোচনা করে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে দোকান বুঝিয়ে দেয়া হবে।’
আবু আজাদ/এআরএ/এমকেএইচ