‘যুক্তরাজ্যফেরতদের ৪দিন কোয়ারেন্টাইন পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন’

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১২:২৬ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২১

১৪ দিনের বদলে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসা ব্যক্তিদের চারদিন করে কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন বলে মনে করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এ রোগের সুপ্তিকাল ১৪ দিন, ফলে ১৪ দিনের মধ্যে যেকোনো সময় সংক্রমিত হওয়ার এবং তাদের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া, কোভিড-১৯ এর নতুন স্ট্রেইন পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদেরকেও ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিটি।

সোমবার (১৮ জানুয়ারি) কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ২৫তম অনলাইন সভায় এ ধরনের একাধিক সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহর। সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মহিবুর রহমান ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল অফিসার আমানুল হকের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন কমিটির সদস্যরা। 

বিস্তারিত আলোচনা শেষে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়-

- যুক্তরাজ্য থেকে বিমানে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার সরকারি ব্যবস্থাপনায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে চারদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর কোভিড-১৯ টেস্টে নেগেটিভ হলে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

- কোভিড ১৯-এর সংক্রমণ হারে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হওয়ায় নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো প্রয়োজন। পরীক্ষার জন্য জনসাধারণকে উৎসাহী করতে নির্ধারিত একশ টাকা ফি বাতিল করে বিনামূল্যে করার সুপারিশ করা হয়।

- নতুন পদোন্নতি পাওয়া জুনিয়র কনসালটেন্টদের পদায়ন করা হলে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হাসপাতালগুলোতে শূন্যতা দেখা দিতে পারে। এতে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। প্রশিক্ষিত জনবল প্রস্তুত না করা পর্যন্ত তাদের পদোন্নতি দিয়ে বর্তমান কর্মস্থলে রাখার ব্যাপারে মতামত দেয়া হয়।

- কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘোষিত আর্থিক সহায়তা এখনও পাননি। এজন্য চলমান প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা দরকার।

- দেশব্যাপী ভ্যাকসিন দেয়ার যে পরিকল্পনা স্বাস্থ্য অধিদফতর করেছে তার রূপরেখা তুলে ধরে এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নিম্নোক্ত সুপারিশ তুলে ধরে কমিটি-

- ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বড় নগরীগুলোতে ভ্যাকসিন প্রদান কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় ওইসব এলাকায় ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করতে সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।

- রেজিস্ট্রেশনের জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে গণমাধ্যমে প্রচারণার ব্যবস্থা করা দরকার। রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং যারা রেজিস্ট্রেশন করতে পারেননি তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে।

- ভ্যাকসিন দেয়ার পর অন্তত ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

- ভ্যাকসিন কার্যকরী হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার। যথাযথ স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার পর অ্যান্টিবডি দেখা প্রয়োজন। ফার্মাকোভিজিল্যান্সের জন্য প্রস্তাব অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

- কোভিড-১৯ টিকা পরবর্তী বছরগুলোতেও প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ ধরনের নতুন মহামারি সৃষ্টি হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। অন্যান্য প্রচলিত রোগের জন্য শিশু ও বয়স্কদের টিকাদান কর্মসূচি চালু আছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশেই ভ্যাকসিন তৈরির সক্ষমতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। বেসরকারি উদ্যোগের অনিশ্চয়তা ও দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণকরণ গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়।

 

এমইউ/এসএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।