ফিরে দেখা করোনা মহামারির এক বছর
![ফিরে দেখা করোনা মহামারির এক বছর](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/corona-20210308143419.jpg)
দেশে মহামারি করোনাভাইরাসে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার এক বছর পূর্ণ হলো আজ (৮ মার্চ)। এরপর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর সংবাদ আসে। অজানা এ রোগ নিয়ে সারাদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী এ রোগের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতি ও কার্যকর ওষুধ সম্পর্কে তখনও অস্পষ্টতা থাকায় শুরুর দিকে করোনা রোগীর চিকিৎসায় হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
আক্রান্ত করোনা রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে বিশেষায়িত হাসপাতাল, প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব, নমুনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি না থাকা, নমুনা পরীক্ষার কীটের অপ্রতুলতা, এন-৯৫ মাস্ক সংকট ও হাইফ্লো অক্সিজেন মেশিনসহ নানান কারণে কোথাও সুচিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছিল না। এরই মধ্যে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য দ্রুত কীটসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হয়। শুরুর দুই-তিন মাস করোনা আতঙ্ক এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, অনেক পরিবারের সদস্যরা ভয়ে আপনজনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ফেলে রেখে গেছে। মৃত্যুর পর লাশ দাফন পর্যন্ত করতে যায়নি। কিন্তু ধীরে ধীরে নমুনা পরীক্ষার কীট সংগ্রহ, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে করোনা শনাক্ত করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ল্যাবরেটরি চালু করা, প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্সসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল তৈরির মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভীতি দূর হয়।
করোনা প্রতিরোধে জাতীয় পরামর্শক কমিটিসহ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে করোনা থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে ব্যপক প্রচার প্রচারণা চালানোর ফলে জনগণও সচেতন হয়। ধীরে ধীরে কমতে থাকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, যা আগের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম। ইতিমধ্যেই করোনা টিকাদান শুরু হয়েছে। ৫০ লাখের বেশি মানুষ করোনা টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধনও সম্পন্ন করেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৩৯ লাখ মানুষ টিকা নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে চলতি ২০২১ সালের ৭ মার্চ পর্যন্ত সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশে ৪১ লাখ ৪৬ হাজার ২০৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
বিভাগীয় পরিসংখ্যান অনুসারে করোনায় মোট মৃতের প্রায় ৭৪ শতাংশের বেশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে। তবে শুধুমাত্র ঢাকা বিভাগেই মোট মৃত্যুর ৫৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়। আক্রান্ত মোট রোগীদের মধ্যে চিকিৎসা গ্রহণে সুস্থ হয়ে উঠেছেন পাঁচ লাখ তিন হাজার তিনজন।
গত এক বছরে যেভাবে করোনার সংক্রমণ হলো :
২২ জানুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ চীন থেকে আগত পর্যটকদের সকলের হেলথ স্ক্রীনিংয়ের নির্দেশনা দিয়ে সতর্কতা জারি করে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১ ফেব্রুয়ারি একটি বিশেষ ফ্লাইটে চীনের উহানে আটকা পড়া ৩১২ বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। করোনার নমুনা পরীক্ষায় তাদের কারও করোনা ধরা পড়েনি।
৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয়। ৭০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মার্চ মাসের শেষে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হয় ৫১ জন ও পাঁচজনের মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে করোনা রোগীর সংখ্যা ১ জুন ৫০ হাজার, ১৮ জুন একলাখ, ১ জুলাই একলাখ ৫০ হাজার, ১৭ জুলাই দুই লাখ, ২৫ আগস্ট তিন লাখ এবং ২০ সেপ্টেম্বর রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে তিন লাখে উন্নীত হয়। গত বছরের ২০ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ চার হাজার ১৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়।
আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলমগীর হোসেনের কাছে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে দেশে বর্তমানে করোনার সংক্রমণ আগের তুলনায় কম। টিকা নেয়ার পরও মুখে মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।’
এমইউ/এমএইচআর/জেআইএম