মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার মানুষ
রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী জুতার ব্যবসায়ী আতাহার হোসেন (ছদ্মনাম)। শনিবার (৩ এপ্রিল) বিভিন্ন গণমাধ্যমে করোনা সংক্রমণরোধে সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে সাতদিনের লকডাউন শুরু হচ্ছে- এমন কথা শুনে চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। গত দুই মাসে এ ব্যবসায়ী চীন থেকে চার কোটি টাকার জুতা আমদানি করেছেন। ফুলবাড়িয়ার গোডাউনে জুতা মজুত রেখেছেন।
আসন্ন রমজান উপলক্ষে গত একমাস যাবত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাইকাররা এসে জুতা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই দুই কোটি টাকার জুতা বিক্রিও করেছেন। শনিবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কথা শোনার পর থেকে প্রেশার ও ডায়াবেটিস বেড়ে গেছে, চোখে সর্ষেফুল দেখছি।’
বারবার জানতে চাইলেন, ‘লকডাউন কি সাতদিনই থাকবে নাকি আরও বাড়বে।’ কারণ গতবছর রমজানে লকডাউন থাকায় বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মখীন হয়েছিলেন। এবার সে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেবেন ভেবেছিলেন। কথাবার্তার শেষপর্যায়ে বললেন, ‘দোয়া কইরেন। চিন্তায় চিন্তায় না ব্রেনস্ট্রোক কিংবা হার্ট অ্যাটাক করে যেন মারা না যাই। আর মরে গেলে মাফসাফ করে দিয়েন।’
সোমবার থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার সংবাদে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত জুতা ব্যবসায়ী আতাহার হোসেন এভাবেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন। শুধু আতাহার হোসেন একা নন, লকডাউনের সংবাদে তার মতো দেশের হাজারও ব্যবসায়ী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে রাজধানীর নিউমার্কেটে, গাউছিয়া ও চাঁদনী চক মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, করোনার প্রথম ধাক্কা এখনও তারা সামলে উঠতে পারেননি। এরই মধ্যে আবার লকডাউন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ পরিস্থিতি তৈরি করবে।
গাউছিয়া মার্কেটের পোশাকবিক্রেতা সুমন ইসলাম বলেন, সামনে পহেলা বৈশাখ এবং রমজান ও ঈদ উপলক্ষে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে দোকানে পোশাক তুলেছি। এবারও গতবছরের মতো পরিস্থিতি হলে কী যে হবে তা ভেবে অস্থিরতায় সময় কাটছে।
তিনি জানান, দৈনিক ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতনসহ সাত-আট হাজার টাকা খরচ হয়। লকডাউন সাতদিন হলে হয়তো কোনোভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কিন্তু গতবছরের মতো ধাপে ধাপে লকডাউন বাড়লে আরেকদফা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
নিউ সুপার মার্কেটে দৈনিক ৩০০ টাকা বেতনে একটি দোকানে চাকরি করেন কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা রুহুল মিয়া। গতকাল লকডাউনের সংবাদ শুনে তার মালিক জানিয়ে দিয়েছেন কাল থেকে তার আর আসার দরকার নেই। রুহুল মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, চাকরি না থাকলে বউ-বাচ্চা লইয়া না খাইয়া মরুম।’
লকডাউনের কারণে শুধু ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা নন আরও বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ বিচলিত ও অস্থিরতায় পড়েছেন। বাড়ির মালিকরা ভাড়া ঠিক মতো পাবেন কি-না সে দুশ্চিন্তায়, ব্যবসা না চললে কিংবা চাকরি না থাকলে ভাড়াটিয়ারা ভাড়া কীভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে নানা পেরেশানিতে আছেন বলে জানান।
এমইউ/বিএ/জিকেএস