‘আমাগো লগে কন্ট্রাক্ট করেন, বেডের ব্যবস্থা কইরা দিমু’

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১১:০৯ এএম, ১০ এপ্রিল ২০২১

‘অর কত্ত বড় সাহস! গেটে ঢোকার সময় কয় হাসপাতালে বেড তো খালি নাই, কারো লগে কি কথা কইছেন? আমাগো লগে কন্ট্রাক্ট করেন, বেডের ব্যবস্থা কইরা দিমু।’ শুক্রবার (৯ এপ্রিল) দুপুর পৌনে একটার করোনা ডেডিকেটেড ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন রাজধানীর বকশিবাজারের বাসিন্দা তৈয়ব হোসেন।

করোনায় আক্রান্ত এক স্বজনকে হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে হাসপাতালে গেলে সেখানকার দুই কর্মচারী তাকে এমন প্রস্তাব দেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তৈয়ব অভিযোগ করেন, সম্প্রতি হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এক শ্রেণির কর্মচারীর পোয়াবারো। ‘আত্মীয়’ পরিচয়ে রোগী ভর্তি করিয়ে রোগীভেদে জনপ্রতি দুই থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত টাকা নিচ্ছেন তারা।

তবে অভিযুক্ত কর্মচারীদের নাম-পরিচয় জানলেও তার স্বজনকে ভর্তি করাতে হবে, সে কারণে তিনি তা বলতে চাইলেন না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র ঢামেক হাসপাতালই না, করোনা ডেডিকেটেড রাজধানীর ১০টি সরকারি হাসপাতালের প্রতিটিতেই এক শ্রেণির দালাল এই মহামারির মধ্যেও রোগী ভর্তি করিয়ে অবৈধ ব্যবসায় নেমেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে এ দালালচক্রের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত রোগীর স্বজনদের কাছে গিয়ে বেড পাইয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে সাধারণ এবং আইসিইউ বেডের চাহিদা বহুগুণে বেড়েছে। বেড না থাকায় অনেক রোগীকেই ফিরে যেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ফাঁকা থাকা স্বল্পসংখ্যক বেড টাকার বিনিময়ে ‘বিক্রি’ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের শুক্রবার (৯ এপ্রিল) এর তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে করোনা ডেডিকেটেড ১০টি হাসপাতালের দুই হাজার ৭৫১টি বেডে দুই হাজার ৪৭৬ জন রোগী ভর্তি ছিল। ১৩২টি আইসিইউ শয্যার ১২৯টিতে রোগী ভর্তি ছিল। এ হিসেব অনুযায়ী ২৭৫টি সাধারণ বেড এবং তিনটি আইসিইউ বেড ফাঁকা ছিল।

jagonews24

কিন্তু শুক্রবার বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেও অনেক করোনা রোগীই বেডের অভাবে ভর্তি হতে পারেননি।

পুরান ঢাকা থেকে আসা মাহবুব আলম নামে এক রোগীর স্বজন জানান, চার ঘণ্টা অপেক্ষা করেও তারা বেড পাননি। চিকিৎসকরা নাম-টেলিফোন নাম্বার রেখে বলেছেন, বেড খালি হলে ফোন করে ডেকে ভর্তি করাবেন।
হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘এটা কি সান্ত্বনা নাকি সত্যি, কে জানে? কেউ কেউ বলছে, প্রভাবশালী কারও তদবির কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট না করলে বেড পাওয়া যাবে না।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেব অনুযায়ী সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে শুক্রবার চারটি আইসিইউ বেড খালি ছিল। কিন্তু বেশ কয়েকজন করোনা রোগীর স্বজন জানান, সেখানে গেলে তাদের বলা হয় আইসিইউ বেড একটিও ফাঁকা নেই।

ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক জানান, অনেকেই এখন ভয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছে।

হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কোভিড রোগীদের ভর্তির নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪ শতাংশের কম, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৬ শতাংশের কম এবং ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, কিডনি ও রোগ প্রতিরোধ কম এমন রোগীকে ভর্তিযোগ্য বলে বিবেচনা করা হয়।’

এমইউ/এসএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।