যাত্রী নেই, অলস সময় কাটাচ্ছেন রিকশাচালকরা
করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়ায় চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। এতে রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে গেছে। ফলে যাত্রী না পেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস সময় পার করতে হচ্ছে রিকশাচালকদের।
যাত্রী না থাকলেও অনেকেই পেটের টানে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছেন। মহল্লার গলির রাস্তা ও প্রধান সড়কের মোড়ে মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। কেউ কেউ যাত্রী না পেয়ে রাস্তার এক মাথা থেকে অন্য মাথায় খালি রিকশা নিয়ে যাত্রী খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
শুক্রবার রাজধানীর মালিবাগ, রামপুরা ও খিলগাঁও এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এসব অঞ্চলের অন্তত ৫০ জন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। তাদের অধিকাংশই জানিয়েছেন সকাল ১১টা পর্যন্ত মাত্র একজন করে যাত্রী পেয়েছেন।
তারা জানান, সরকার কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করায় বাইরে মানুষের চলাচল কমে গেছে। যারা বের হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করছেন। এছাড়া শুক্রবার হওয়ায় আজ মানুষের যাতায়াত আরও কম। এ কারণে যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
খিলগাঁওয়ের একটি রাস্তায় কয়েকজন রিকশাচালককে একসঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের একজন ময়মনসিংহের হাসমত আলী। বেলা ১১টার দিকে তিনি জানান, সকাল ৮টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। ভাড়া পেয়েছেন মাত্র ৩০ টাকা। পরিস্থিতি যা, দিন শেষে রিকশার জমার টাকা তোলায় কষ্টকর হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, গতকাল ২৫০ টাকা ভাড়া পেয়েছিলাম। আজ তার অর্ধেকও হবে না বুঝতে পারছি। কিন্তু পেট চালাতে হলে তো ঘরে বসে থাকা যাবে না। ঘরে বৌ-বাচ্চা আছে।
তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আমরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে আছি। যারা চাকরি করেন, অফিসে না গেলেও মাস শেষে তারা বেতনের টাকা পাবেন। কিন্তু ভাড়া মারতে না পারলে আমাদের মুখে ভাত জুটবে না।
রামপুরার একটি রাস্তাতেও কয়েকজন রিকশাচালককে একস্থানে জমা হয়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তাদের একজন মো. ফারুক বলেন, অন্য সময় যাত্রীরা আমাদের বলতো ভাই যাবেন? আর এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও আমরা যাত্রী পাচ্ছি না। আগে দিনে ৮০০-৯০০ টাকা রোজগার হতো। কয়েকদিন ধরে ২০০-৩০০ টাকা রোজগার করাই কষ্টকর হয়ে গেছে। এ অবস্থা চললে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
তিনি বলেন, রাস্তায় রিকশা নিয়ে বের হলে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। যাত্রী নিয়ে মেইন রোড দিয়ে গেলে পুলিশ কয়েক জায়গায় যাত্রীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছে। তবে আমাদের কিছু বলছে না। কিন্তু আমরা তো যাত্রীই পাচ্ছি না। বিভিন্ন অফিস খোলা থাকায় গতকাল ৩০০ টাকার মতো ইনকাম হয়েছে। আজ একশ টাকাও হবে না মনে হচ্ছে।
খালি রিকশা নিয়ে মালিবাগের রাস্তায় ঘোরাঘুরি করা আলম মীর বলেন, আমরা দিন আনি দিন খায়। যেদিন আয় না হবে, সেদিন না খেয়ে থাকতে হবে। সকাল থেকে রিকশা চালিয়ে ৫০ টাকা ভাড়া পেয়েছি। গ্যারেজে জমা দিতে হবে ৮০ টাকা। এখনো জমার টাকাই উঠাতে পারিনি। আজ শুক্রবার, তাই মেইন রোডে যাত্রী তেমন পাওয়া যাবে না। এজন্য গলির রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছি। ভাগ্য ভালো হলে যাত্রী পাব, না পেলে তো কিছু করার নেই।
রামপুরা মোল্লা বাড়ি থেকে যাত্রী নিয়ে তালতলা বাজারে যাওয়া রিকশাচালক মামুন বলেন, স্বাভাবিক সময় রামপুরা মোল্লা বাড়ি থেকে তালতলার ভাড়া ৩০-৪০ টাকা টাকা। আজ ২০ টাকায় যাত্রী নিয়ে এসেছি। কি করবো? যা পাওয়া যায়, তাই ভালো।
এদিকে অন্যান্য সময় গণপরিবহন বন্ধ থাকলে রিকশাচালকরা বেশি ভাড়া নিচ্ছেন এমন অভিযোগ হরহামেশাই পাওয়া গেলেও আজ তেমনটা পাওয়া যায়নি। বরং যাত্রীরাও জানিয়েছেন অন্যান্য সময়ের তুলনায় কম ভাড়ায় রিকশা পাওয়া যাচ্ছে।
মালিবাগ হাজীপাড়া থেকে ৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে কমলাপুর যাওয়া রিফাত বলেন, কমলাপুরে আমার খালা থাকেন। খালা অসুস্থ, তাকে দেখতে যাচ্ছি। অন্যান্য দিন যেতে রিকশা ভাড়া ১০০-১২০ টাকা দিতে হতো। আজ ৮০ টাকা দিয়ে যেতে পারছি। তবে রিকশাচালক ১০০ টাকা চেয়েছিলেন, দরদাম করে ২০ টাকা কমিয়েছি।
এমএএস/এমএইচআর/এমএস