রাজধানীজুড়ে ফুটে আছে রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:০৩ পিএম, ২১ এপ্রিল ২০২১

রাজধানীর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আজিমপুরের বাসিন্দা ফজলুর রহমান। স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে ছোট্ট সংসার। পুরো সপ্তাহ ব্যস্ততায় কাটে তার। ছেলেমেয়েকে স্কুলে আনা-নেয়ার দায়িত্ব পালন করেন তার স্ত্রী। তবে সপ্তাহের একদিন ছুটি পেলে সপরিবারে শহর দেখতে বেরিয়ে পড়েন।

কোনো দিন ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে দুপুর বা রাতের খাবার খেতে যান, কোনো দিন আবার চন্দ্রিমা উদ্যান, সংসদ ভবন, লালবাগ কিংবা শাহবাগের জাদুঘরসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে আসেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস জীবন চলার স্বাভাবিক ছন্দে পতন ঘটিয়েছে ফজলুর রহমানের।

jagonews24

গত এক বছরেররও বেশি সময় ধরে বাচ্চাদের স্কুল বন্ধ। তারা ঘরে এক ধরনের বন্দি সময় কাটাচ্ছে। ফজলুর রহমান যখন অফিসে যান তখন ওরা এসে ‘বাবা, কবে বাইরে নিয়ে যাবে’ জিজ্ঞাসা করে।

গতকাল মঙ্গলবার শহর ঘুরে বিভিন্ন এলাকায় রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটে থাকতে দেখেছেন ফজলুর রহমান। এ গল্প করার পর স্ত্রী ও দুই সন্তনের মন খারাপ। লকডাউনের কারণে বের হতে পারবে না তারা। তবুও বাবার কাছে আবদার, ‘বাবা, কবে বেড়াতে যাবো?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সময় বুঝে তোমাদের নিয়ে বের হবো।’

jagonews24

ফজলুর রহমানের মতো রাজধানীর প্রায় প্রতিটি ঘরবন্দি শিশুর এমনই অবস্থা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার গাছে গাছে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে। এতে এক অন্য আমেজ তৈরি হয়েছে প্রকৃতিতে।

বুধবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়ক, পার্কে-উদ্যানে ও আধুনিক ও পুরোনা ভবনের গাছে গাছে উজ্জ্বল লাল রঙের কৃষ্ণচূড়া ফুল ফুটেছে।

সংসদ ভবন সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যানের রাস্তায় দেখা গেছে, দুই ধারের অসংখ্য কৃষ্ণচূড়া গাছে রক্তরাঙা ফুল ফুটে আছে। লকডাউন ও নিরাপত্তাজনিত কারণে এ রাস্তায় মানুষের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। নিরাপত্তারক্ষীরা প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়া বড় কোনো গাড়ি যেতে দিচ্ছেন না।

jagonews24

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে এ রাস্তায় হাঁটতে আসতো অসংখ্য মানুষ। কেউ কেউ চন্দ্রিমা উদ্যান ও সংসদ ভবন এলাকা ঘুরে দেখতে আসতো। বিশেষ করে কৃষ্ণচূড়া ফুটলে এ এলাকায় মানুষের ভিড় লেগেই থাকতো। কিন্তু মহামারিতে সব থমকে গেছে।

শাহবাগের অদূরে রমনা উদ্যানের অস্তাচল প্রবেশ গেটে ফুটে আছে কৃষ্ণচূড়া। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের বিপরীত দিকে রমনা পার্কের ভেতরে কৃষ্ণচূড়া গাছে মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে কোকিল। পথচারী দু-চারজন যারা পায়ে হেঁটে এদিকে আসেন, তারা ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য বিমোহিত হয়ে দেখেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উদয়ন স্কুলের অদূরে, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও দোয়েল চত্বরের সামনেও কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকতে দেখা যায়।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিক্স রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত। একে গুলমোহর নামেও ডাকা হয়। ধারণা করা হয়, কৃষ্ণচূড়া ভারত উপমহাদেশে এসেছে তিন থেকে চারশ বছর আগে। বহুকাল ধরে আছে বাংলাদেশে।

jagonews24

বাংলাদেশে কৃষ্ণচূড়া ফোটে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত। প্রথম মুকুল ধরার কিছুদিনের মধ্যেই পুরো গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়। ফুলের প্রধান বৈশিষ্ট্য এর উজ্জ্বল রঙ। তরুরাজ্যে এত উজ্জ্বল রঙ দুর্লভ। ফুলের পাপড়ির রঙ গাঢ় লাল, লাল, কমলা, হলুদ, হালকা হলুদ হয়ে থাকে।

প্রস্ফুটিত ফুলের ব্যাস ২-৩ ইঞ্চি। বহিরাবরণ সবুজ। ভেতরের অংশ রক্তিম। কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো বড় চারটি পাপড়িযুক্ত। পাপড়ি প্রায় ৮ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা হয়ে থাকে। কৃষ্ণচূড়া জটিল পত্রবিশিষ্ট। প্রতিটি পাতা ৩০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা। ২০ থেকে ৪০টি উপপত্র বিশিষ্ট।

এমইউ/এমএসএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।