চিকিৎসার জন্য ভারতগমন, দেড় বছরের আহাম ঈদের দিনই নিল চিরবিদায়
স্বজন বা নিজেদের চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে যারা আটকা পড়েছেন, তাদের নেই ঈদ আনন্দ। করোনা মহামারির মধ্যেও বিদেশে চিকিৎসার জন্য যারা গেছেন, তাদের সবাই কোনো না কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের আতঙ্ক। দুই দেশের সীমান্ত বন্ধ থাকায় ঈদের মাঝে দেশেও ফিরতে পারছেন না তারা। সবমিলিয়ে এক বিভীষিকাময় সময় কাটছে তাদের।
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে অনলাইনে কথা বলে এ অবস্থার কথা জানা গেছে।
রাজধানীর নাখালপাড়ার শেখ আবদুল কাদের ছেলে শেখ আহামকে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য কলকাতা নেন গত মাসে। কিন্তু ঈদের দিনেই সেই শিশুটি মারা গেছে। ঈদের দিনে তাই ছেলের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে হাসপাতাল-হাইকমিশনে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে সেই বাবাকে।
শেখ আবদুল কাদেরের মামাতো ভাই নুরুল ইসলাম রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘২৪ মে কলকাতা গেছেন তারা। বাচ্চাটি আজ মারা গেছে। ওর বয়স হয়েছিল মাত্র দেড় বছর। মরদেহ দেশে আনতে কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনে ঘুরছেন আমার ভাই। দেশে নাকি মরদেহ আনা যাবে বলে জানিয়েছেন তারা। এই অবস্থায় ঈদ কী!’
এর আগে ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা যান স্বামী আর জে রাশেদ রাজ (২৭)। কিন্তু করোনার কারণে মরদেহ দেশে আনতে পারেননি। ভারতের ভেলোরে স্বামীকে দাফন করার পর স্বামী হারানো স্ত্রী ফারজানা আক্তার নিজেও সেখানে আটকা পড়েছেন।
এ বিষয়ে ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমার সাথে রেহানা বেগম ও শাবানা আক্তার নামে আরো দুইজন আটকা আছে। আমাদের আবার কিসের ঈদ! আমরা ভয়, আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা নিয়ে আছি। কবে দেশে যাব, এটাই এখন একমাত্র ভাবনা।’
সেখানে আটকা পড়া বরিশালের বানারীপাড়ার চাখার ইউনিয়নের জিয়াউল হাসান জুয়েল বলেন, ‘আমার ছেলে আরিয়ানকে নিয়ে সিএমসি হাসপাতালে ভর্তি আছি। ওর ৮ম কেমোথেরাপি শুরু হয়েছে ১১ মে থেকে। শেষ হবে ১৭ মে। এখানে কাছাকাছি কোনো মসজিদ নেই। তিন কিলোমিটার দূরে টিপু সুলতান মসজিদ। তাই ঈদের নামাজ পড়াও হয়নি।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বন্ধ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। এর একটি বড় অংশ যান ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে (সিএমসি)। এর বাইরে সেখানে নারায়ণা হৃদয়ালয় এবং কোলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চাপ দেখা যায়। করোনার সংক্রমণ রোধে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের কারণে সেখানে গিয়ে গত বছরের মতো এবারও অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা আটকা পড়েছেন।
এইচএস/এমএইচআর/এমএস