‘৪১ বছরে এমন কঠিন সময় কখনো আসেনি’

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০১:৩৮ পিএম, ২২ মে ২০২১

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হোটেল সোনারগাঁওয়ের পূর্বপাশের প্রবেশপথের কাছের ফুটপাতে কয়েকজন মুসল্লি ইমামের পেছনে নামাজ পড়ছিলেন। মানুষের চলাচলের জন্য নির্মিত ফুটপাতের এ স্থানটি বহু বছর ধরে নামাজ পড়ার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ফুটপাত ঘেঁষেই অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প। এখানে নিয়মিত নামাজ হয় বলে সেনাবাহিনী কয়েক ফুট জায়গা টাইলস করে দিয়েছে।

এখানেই বৃহস্পতিবার (২০ মে) হাতেগোনা যে কয়েকজন মুসল্লি জোহরের নামাজ পড়ছিলেন তাদেরই একজন মধ্যবয়সী আবদুস সালাম। নামাজ শেষে তিনি একটু সামনে এগিয়ে ছাউনির সামনে যান। সেখানে লেখা রয়েছে বাংলাদেশ ট্যুর অ্যান্ড রেন্ট-এ কার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয় (রেজি: নং-১৭৫৯)। এখানে সব ধরনের প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস ভাড়া দেয়া হয়। রেন্ট-এ কার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে এ সময় মাত্র দুজনকে বসে ঝিমুতে দেখা যায়।

সোনারগাঁও হোটেলের অদূরে ফুটপাতে নামাজ পড়ার এ স্থানটি কিভাবে গড়ে উঠেছে তা জানাতে গিয়ে আবদুস সালাম বলেন, এক সময় তাদের এই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়টি রেন্ট-এ কার ব্যবসায়ীদের পদচারণায় সদা মুখরিত থাকতো। ঢাকা শহরে তখন এত গাড়ি ছিল না। বেশিরভাগ মানুষ বিশেষ করে হোটেল সোনারগাঁওয়ে আসা বিদেশি অতিথিরা তাদের গাড়িই ভাড়া করে এয়ারপোর্টসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। তখন গাড়িচালক ও মালিকরা ওয়াক্ত হলে পাশের এ স্থানটিতে নামাজ পড়তেন।

rent1

তিনি বলেন, মহামারি করোনার কারণে সোনারগাঁও হোটেল অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকায় রেন্ট-এ কারের ব্যবসায় পুরোপুরি ধ্বস নেমেছে। তাদের অনেকেই আয় রোজগার না থাকায় গাড়ি বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। এখানকার অধিকাংশ ব্যবসায়ীর চার-পাঁচটি করে গাড়ি রেন্ট-এ কারে দেয়া গাড়ি ছিল। কিন্তু এখন দু’চারজন ছাড়া সবাই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছেন।

সদামুখরিত এ কার্যালয়টি এখন মৃতপ্রায় বলে মন্তব্য করে আবদুস সালাম বলেন, ‘৪১ বছর যাবত রেন্ট-এ কারের এ ব্যবসার সাথে জড়িত আছি। এম দুঃসময় জীবনে আর কখনো আসেনি।’

তিনি আরও বলেন, তার নিজেরও কয়েকটি ভাড়ার গাড়ি ছিল। গত দেড় বছরে তিনি তিনটি গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন।

তবে সোনারগাঁও হোটেল যখন চালু থাকে তখন তাদের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হয়। রেন্ট-এ কারের ব্যবসা করে সংসার চালানো ও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে ভালোই ছিলেন বলে তিনি জানান।

রেন্ট-এ কার্যালয়ের অদূরে যেখানে নামাজ পড়ানোর হয় সেখানকার ইমাম জানালেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এখানে নামাজ পড়ান তিনি। আগে বেশি মুসল্লি হলেও এখন কম হয়। ফজর বাদে তিনি এখানে বাকি চার ওয়াক্ত নামাজ পড়ান। মাগরিবের ওয়াক্তে বেশি মুসল্লি হয়।

ওজুর জন্য পানির ব্যবস্থা আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সময় পানির লাইন থাকলেও এখন নেই। পাশেই অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প থেকে পানি এনে ওজু করেন মুসল্লিরা।

এখানে নামাজ পড়ার জায়গাটিতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা টাইলস লাগিয়ে দেয়ায় তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এমইউ/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।