‘আমাগোর চেয়ে জরুরি কাজে কে বের হয়’
বৃহস্পতিবার, সকাল পৌনে ৯টা। রাজধানীর পান্থপথ চৌরাস্তার মোড়ে বীর উত্তম এ কে এম শফিউল্লাহ সড়কে লকডাউনের কারণে বন্ধ থাকা দুটি পেইন্ট অ্যান্ড হার্ডওয়্যারের দোকানের সামনে বিষণ্ন বদনে বসে ছিলেন জনা বিশেক মানুষ। করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব না মেনে তাদেরকে এভাবে বসে ও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ছুটে এলেন চেকপোস্টে কর্তব্যরত এক পুলিশ কর্মকর্তা।
তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা কারা। লকডাউনে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া নিষেধ। আর আপনারা দলবেঁধে এভাবে বসে আছেন।
তাদের মধ্যে মধ্যবয়সী একজন দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, ‘স্যার, আমরা দিনমজুর। রাজমিস্ত্রির যোগালির কাজ করি। কাম করলে পেটের ভাত জোটে না হলে উপোষ থাকতে হয়। আমাগোর চেয়ে জরুরি কাজে কে বের হয়।’ এ কথা শুনে পুলিশ কর্মকর্তা কিছুটা নরম হলেও তাদেরকে চেকপোস্ট থেকে দূরে গিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বসতে বলে চলে গেলেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বগুড়ার বাসিন্দা আলফাজ মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘লকডাউনে আমাগো পেডে লাথি পড়ছে। গত তিনদিন যাবত প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে এসে বসি থাকি। লকডাউনে বিভিন্ন সাইটে ভবনের কাজ বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া খুচরা কাজকামও বন্ধ। গত তিনদিনের করোনায় কেউ একদিন আবার কেউ কাজই পাননি।’
গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়ে দূর থেকে একজন ছুটে এসে বললেন, স্যার, আমাগো তো না খাইয়্যা মরার উপক্রম হইছে। শুনি সরকার এত এত টাকার খাবার সাহায্য দেয়। কই আমরা তো এগুলো পাই না। রেডিওতে শুনলাম প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওযা যাইবো না। আমাগো তো কাম না করলে আয় রোজগার বন্দ থাকে। আমরা ঘরে বইস্যা থাকলে সরকার কি খাওন দেবে।
আজ ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী লকডাউনের প্রথম দিনে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে এ ধরনের দিনমজুরের দেখা মেলে। তারা প্রতিদিন সকালে একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে কোদালও বেলচাসহ অপেক্ষা করেন। ভবন নির্মাণ কিংবা বাসা বাড়িতে যারা মেরামতের কাজ করান তারা এসে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে তাদের নিয়ে যান। তাদের অনেকের সঙ্গে আলাপকালে করোনাজনিত লকডাউনের কারণে তাদের অনেকেরই আয় বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান।
এমআরএম/এএসএম