অলিগলিতে আড্ডা-বাজার সবই চলছে
করোনার সংক্রমণ কমাতে সরকারঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের তৃতীয় দিনে রাজধানীর মূল সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল অনেকটা বেড়েছে। অলিগলির সড়কে মানুষের চাপ সবচেয়ে বেশি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব সড়কে মানুষের চলাচল বেড়ে যায়। দোকানপাটও খোলা থাকে। চায়ের দোকানে বসে আড্ডা।
র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনীর টহলের সময় দোকান বন্ধ করে যে যার ঘরে ঢুকে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চলে গেলে ফের রাস্তায় নামে। এভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ‘ইঁদুর বেড়াল খেলা’ খেলে অলিগলিতে আড্ডা, বাজার ও ব্যক্তিগত কাজ করছে লোকজন।
অন্যদিকে প্রধান সড়কে চেকপোস্টে পুলিশের কিছুটা নিষ্ক্রিয়তা চোখে পড়েছে। তারা বলছেন, সড়কে মানুষের উপস্থিতি কম। বিনা প্রয়োজনে কেউ বের হলে তাদের ধরে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
শনিবার (৩ জুলাই) মিরপুর, মানিকদি, গুলশানসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিরপুর-১১ নম্বরের নান্নু মার্কেটে অর্ধেক শাটার খুলে অনেকেই দোকান খোলা রাখছেন। সড়কে চায়ের দোকানে ভিড় করে লোকজন গল্প করছেন। এ এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দল এলে তারা ছোটাছুটি করে বিভিন্ন দোকানে ঢুকে আড়ালে চলে যান। কেউ বা অন্য সড়কে চলে যান।
মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচাবাজার, প্রশিকা মোড়েও দেখা গেছে একই অবস্থা। সেনাবাহিনীর টহল দল চলে যাওয়ার পর আবারও তারা ফুটপাতে চায়ের দোকানে এসে দাঁড়ান। পুনরায় জিনিসের পসরা বসান ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা।
সেখানে অবস্থানরত ফজলে হাশেম নামে এক ব্যক্তির কাছে কেন রাস্তায় বেরিয়েছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘ছেলের জন্য খাতা-কলম কিনতে বের হয়েছি। লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় অনেক দূর গিয়ে কিনতে হলো।’
এদিকে মিরপুর-৬ নম্বরে কাঁচাবাজারে দুপুর ১২টায় পুলিশের টহল গাড়ি আসে। তখন হুড়মুড় করে ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা সব কিছু গুছিয়ে চলে যান। পুলিশ চলে গেলেও আগের অবস্থায় ফিরে আসেন।
আবেদিন নামে এক ব্যক্তি ভ্যানে আম বিক্রি করছিলেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে পুলিশ আসে আর চলে যায়। কেউ কর্ণপাত করে না। সবাই পেটের জ্বালায় বের হয়।’
মিরপুর-১০ নম্বরে শাহআলী মার্কেটের পেছনেও মানুষের জটলা দেখা যায়। প্রধান সড়কে মাস্ক পরে চলাচল করলেও অলিগলিতে মাস্ক পরার প্রতি উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে প্রধান সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস ও পণ্যবাহী যান চলাচল কিছুটা বেড়েছে। এ ছাড়া সড়কে প্রচুর মোটরসাইকেল ও রিকশা চলতে দেখা যায়।
মিরপুর-১০, ২ ও ৬ নম্বরে অন্তত পাঁচটি চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এ চেকপোস্টগুলো দিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল নির্বিঘ্নে পার হচ্ছে।
মিরপুর-৬ নম্বরে টোলারবাগ কলোনির আগে বসানো একটি চেকপোস্টে কথা হয় পুলিশ সদস্য ফারুকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা হচ্ছে। একেবারেই যারা অপ্রয়োজনে বের হয়েছেন, তাদের গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ।’
মিরপুর-১০ নম্বর চেকপোস্টে ট্রাফিক সার্জেন্ট ফরহাদ বলেন, ‘সড়কে মানুষের উপস্থিতি কম। যারা বের হচ্ছেন তারা আসলে চিকিৎসা ও অফিসের কাজে বের হচ্ছেন। অহেতুক কেউ বের হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’
গুলশান-১ নম্বর চেকপোস্টে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সকাল থেকে যাদের গাড়ি রাস্তায় বের হয়েছে, তারা চিকিৎসা ও অফিসের কাজে বের হয়েছেন। বেশির ভাগই শিল্প-কারখানার গাড়ি।’
এসএম/জেডএইচ/এএসএম