কলসির ওপর ভবন দেখতে মানুষের ভিড়

২৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো একটি ভবন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য খোঁড়া হয় মাটি। মাটি খুঁড়তেই বেড়িয়ে আসে একের পর এক কলসি। প্রায় ২৬ শতক জায়গায় ভবনটি কয়েকশ কলসির ওপরই দাঁড়িয়ে ছিল।

বিষয়টি জানাজানি হলে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটার নজুমিয়া লেনে ভবনটি দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছে মানুষ। তাছাড়া চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও ভবনটি পরিদর্শন করেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ভবনটি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। ভবনটির নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

রোববার (১১ জুলাই) বিকেলে সরেজমিরে ভবনটিতে শতাধিক দর্শনার্থী দেখা গেছে। নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে এসেছেন তারা। পাশাপাশি ভবনটির নিরাপত্তায় একদল পুলিশের উপস্থিতিও দেখা গেছে।

jagonews24

দর্শনার্থী কলেজছাত্রী শাহানা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকাল ফেসবুকে দেখেছি কলসির ওপর ভবন দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টি দেখতে এসেছি। কতগুলো কলসির ওপর এত বড় ভবনটি কেমনে দাঁড়িয়ে ছিল এখনও মাথায় আসছে না।’

নিরাপত্তার কাজে দায়িত্বরত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দিদারুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভবনটি দেখতে প্রচুর লোকজন আসছে। আমরা সরিয়ে দিলেও দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে। আগামীকাল থেকে নগরের পুলিশ লাইন্স থেকে ফোর্স মোতায়েন করা হতে পারে।’

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের বনেদি ব্যবসায়ী ও বক্সির হাটের প্রতিষ্ঠাতা হাজি শরীয়তুল্লাহ সওদাগর ১৭ শতাব্দীতে মিয়ানমারের রেঙ্গুন থেকে সারের জাহাজে বোঝাই করে মাটির এই কলসিগুলো আনেন। এগুলো ঘরের ভিটির তলায় স্থাপন করে ইট-সুরকির ভবনটি নির্মাণ করেন।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে ভবনটির নিচে এসব কলসি দেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে এটিই ছিল তৎকালীন সময়ের সর্বাধুনিক পদ্ধতি।

এদিকে খবর পেয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলমসহ একাধিক বিশেষজ্ঞ ভবনটি সংরক্ষণ করতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

jagonews24

এদিকে ভবনটি দেখে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ‘ভবনটি সংরক্ষণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এটি সংরক্ষণ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৫ সালের প্রত্ন আইনে স্থাবর সম্পত্তি ১০০ বছর ও অস্থাবর সম্পত্তি ৭৫ বছরের পুরোনো হলে তা প্রত্ন সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো ভবন। ভবনের মালিককে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে এটি অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণ করা হবে।’

হাজি শরীয়তুল্লাহ সওদাগরের বংশধর মো. ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বাবা বাদশা মিয়ার দাদা ছিলেন হাজি শরীয়তুল্লাহ। তিনি রেঙ্গুন থেকে জাহাজযোগে কলসিগুলো এনে ভবনটি নির্মাণ করেন। বংশ পরম্পরায় এখন আমরা বাড়িটির মালিক। হাজি শরীয়ত উল্লাহর পাঁচ ছেলে ছিল। তার এক ছেলের নাম আবদুল আজিম। আবদুল আজিমের একমাত্র ছেলে আমার বাবা বাদশা মিয়া। আমরা এখন আট ভাই এক বোন বাড়িটির মালিক। শরীয়তুল্লাহর বিভিন্ন সম্পত্তি বংশের সদস্যদের মধ্যে ভাগ হতে হতে বাড়িটি আমাদের ভাগে পড়েছে। এই বাড়িটি ছাড়া আমাদের কিছুই নেই। শুনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাড়িটি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন। যদি বাড়িটি সংরক্ষণ করা হয়, তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি থাকবে, আমরা যেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাই।’

এর আগে ভবনের নিচে কলসি থাকার বিষয়টি জানা ছিল কি-না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ‘হাজি শরীয়তুল্লাহর দুটি জাহাজ ছিল। জাহাজযোগে কলসি এনে ভবন নির্মাণের কথা একটু একটু শুনেছিলাম। তবে এ ভবনের নিচে যে, কলসি আছে সেটি জানা ছিল না।’

মিজানুর রহমান/জেডএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।