একটা বেডের জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটাছুটি

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:৪৩ পিএম, ২৭ জুলাই ২০২১

রাজধানী ঢাকার অদূরে ভুলতা গাউছিয়া থেকে করোনা আক্রান্ত খোদেজা বেগমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন তার স্বজনরা। কিন্তু গত দুইদিন ধরে হাসপাতালে ঘুরেও তাকে ভর্তি করাতে পারেননি।

খোদেজার ভাইসহ একাধিক আত্মীয় এ হাসপাতালে চাকরি করলেও বেড খালি না থাকায় ভর্তি করাতে পারছেন না তারা। শেষপর্যন্ত প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট ভোগা খোদেজাকে ভাড়ায় অক্সিজেন সিলিন্ডার এনে বাসায় রেখে কোনোভাবে চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে ঢামেক হাসপাতাল-২-এর করোনা ইউনিটের সামনে দেখা গেল খোদেজাকে। অক্সিজেনের নল লাগিয়ে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে শুয়ে রাখা হয়েছে।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে খোদেজার ভাই বলেন, ‘আজ হয়তো একটা বেডের ব্যবস্থা হতে পারে এমন নিশ্চিত আশ্বাস পেয়ে তৃতীয় দিনের মতো বোনকে নিয়ে এসেছি।’

jagonews24

অদূরে আরও কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্সে করোনা আক্রান্ত রোগীকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের স্বজনরা ভর্তি করাতে এদিকে সেদিকে ছোটাছুটি করছিলেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দেন, এখানে আইসিইউ তো দূরের কথা সাধারণ বেডও খালি নেই। রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতে দেখা যায়।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই নয়, অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগী, বিশেষ করে আইসিইউ প্রয়োজন এমন রোগীর স্বজনরা অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগীকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটোছুটি করছেন।

একাধিক হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বেশীর ভাগই রোগী এখন রাজধানীর বাইরে থেকে আসছেন। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে রোগী ম্যানেজ করতে না পারায় ঢাকায় রেফার করছেন। কোনো কোনো রোগীর স্বজন সরাসরি ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে আসছেন। ভাগ্যে ভালো হলে সরকারি হাসপাতালে বেড জুটছে না হলে বেসরকারিতে ভর্তি হতে হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ বেশি হওয়ায় সরকারি হাসপাতালেই রোগীর চাপ বেশি।

এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে দেশে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। পাশাপাশি টিকা প্রদানের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। নানা প্রচেষ্টার পরও অধিকাংশ মানুষ এখনও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় সংক্রমণ কমছে না বরং বাড়ছে।

jagonews24

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২৬ জুলাইয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে মোট সাধারণ ৫ হাজার ৭১৭টি বেডের মধ্যে ১ হাজার ৭২৮টি ও ৯০০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৩৩টি খালি রয়েছে। মোট শয্যার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৭৫৫টি বেডের মধ্যে ১ হাজার ১৪৪টি ও ৩৯৩টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৪৩টি খালি রয়েছে।

অপরদিকে বেসরকারি হাসপাতালে ১ হাজার ৯৬২টি সাধারণ বেডের মধ্যে ৫৮৪টি ও ৫০৭টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৮৫টি খালি রয়েছে। রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে খাতা-কলমে ১ হাজার ১৪৪টি বেড খালি থাকলেও রোগী ভর্তি করা যাচ্ছে না। আরও করুন অবস্থা আইসিইউতে রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে।

স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শতভাগ মাস্ক পরিধানসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকার আওতায় না আনা পর্যন্ত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে।

এমইউ/জেডএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।