একটি শয্যাও খালি নেই মুগদা হাসপাতালে
‘পুরুষ বিছানা খালি নাই। মহিলা বিছানা খালি নাই। আইসিইউ বেড ০০ খালি নাই। এইচডিইউ বেড ০০ খালি নাই। দুঃখিত বিছানা খালি নাই।’ এমন লেখা সাইনবোর্ড ঝুলছে রাজধানীর করোনা ডেডিকেটেড ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
শনিবার (৩১ জুলাই) সরেজমিনে হাসপাতালটি ঘুরে দেখা গেছে, করোনা উপসর্গ নিয়ে জরুরি বিভাগে একের পর এক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। পরিস্থিতি বুঝে কাউকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাদের অবস্থা গুরুতর তাদের মধ্য থেকে কিছু রোগীকে ভর্তি নেয়া হচ্ছে।
মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চাপে হাসপাতালটির এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে পরিমাণ বেড (শয্যা) আছে তার থেকে বেশি রোগী বর্তমানে ভর্তি রয়েছে। এদের অনেকের অবস্থা গুরুতর। আইসিইউ প্রয়োজন হলেও কেউ কেউ আইসিইউ পাচ্ছেন না। ২৪টি আইসিইউ’র সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। কখন একটি আইসিইউ বেড খালি হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন অনেক রোগীর স্বজন।
বৃদ্ধ বাবার শ্বাসকষ্ট হওয়ায় দুপুর ১২টার দিকে হাসপাতালটিতে ছুটে আসেন ফেরদৌসি বেগম। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফেরদৌসির বাবাকে দেখে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করেন।
ফেরদৌসি বলেন, আমার বাবার হার্টের সমস্যা আছে। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় বাবাকে এখানে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসক দেখে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি করে নিয়েছেন। তবে দু’দিন আগে করোনা পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এরপরও করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি কেন করলো বুঝতে পারছি না।
অক্সিজেন লাগিয়ে স্ট্রেচারে শুইয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মাকে মুগদা হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের বাসা রাজারবাগে। কাছেই একটি বেসরকারি হাসপাতালে মা ভর্তি ছিলেন। করোনা পরীক্ষায় রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। মা’র অক্সিজেন লেভেল কমে আসছে, তাই এখানে নিয়ে এসেছি। চিকিৎসক ভর্তিও করে নিয়েছেন।
জ্বর, ঠান্ডা, কাশির সমস্যা থাকায় বেলা ১১টার দিকে বড় ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আজ চারদিন ধরে ভাইয়া অসুস্থ। জ্বর কমছে না। এর সঙ্গে ঠান্ডা ও হাল্কা কাশি আছে। এখানে চিকিৎসক দেখে কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে করোনা পরীক্ষা করতে বলছেন।
তিনি আরও বলেন, ভাইয়ার অনেক কষ্ট হচ্ছে। ভর্তি নেয়ার জন্য এখানে অনেক অনুরোধ করলাম। কিন্তু ওনারা বললেন বেড খালি নেই। তাছাড়া রোগীর বর্তমান যে অবস্থা তাতে ভর্তি হওয়ার দরকার নেই। বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া ভালো। অবস্থা খারাপ হলে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলেছেন।
হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের ইনচার্জ মো. মারুফ হোসেন শিকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে রোগীর প্রচণ্ড চাপ। বর্তমানে আমাদের এখানে কোনো বেড খালি নেই। বর্তমানে ৩২০টি বেডের বিপরীতে ৩২৬ জন ভর্তি রয়েছেন। আমরা যদি রোগীদের বেড দিতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো। চিকিৎসকদের চিকিৎসা দেয়া সহজ হতো।
তিনি বলেন, ঈদের আগের তুলনায় এখন রোগীর চাপ বেশি। গত ২৭ জুলাই থেকে আমরা রোগীদের বেড দিতে পারছি না। ঈদের আগে রোগীর চাপ এর চেয়ে কম ছিল। এখন দিন যত যাচ্ছে, রোগীর চাপ তত বাড়ছে।
মারুফ বলেন, যারা ভর্তি আছেন, তাদের অনেকেরই আইসিইউ দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু আইসিইউ বেড খালি নেই। যখন একটি আইসিইউ বেড খালি হবে তখন অনেক রোগীর স্বজন তার জন্য সিরিয়াল দিয়ে অপেক্ষা করছেন। পরিস্থিতি এতটাই করুণ। চিকিৎসকরা রোগী সুস্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আজ করোনা উপসর্গ নিয়ে কতজন এসেছেন- এমন প্রশ্ন করা হলে মারুফ হোসেন বলেন, আজ ৪৮ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এর মধ্যে ১০ জনকে ভর্তি নেয়া হয়েছে। বাকিদের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।
তিনি বলেন, করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সাত হাজার ৯১০ জন এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ চার হাজার ৪৫৫ এবং নারী তিন হাজার ৪৫৫ জন।
এমএএস/এআরএ/এএসএম