‘ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র হতে পারে’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০১ পিএম, ০৩ অক্টোবর ২০২১

ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ রেলওয়ের বিরুদ্ধে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি।

রোববার (৩ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানান পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির। অবিলম্বে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে সহকারী ট্রেন চালক কাওছার আহম্মেদ চোখে মারাত্মক আঘাত পান। এরপর ১৫ আগস্ট খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সীমান্ত এক্সপ্রেসে পাথর নিক্ষেপে আজমীর নামে এক শিশুর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। চলন্ত ট্রেনে পাথরের আঘাতে রেলকমীর্দের মৃত্যু ঘটনাও ঘটেছে।

২০১৯ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া সুবর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ হয়। একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর রাত ৭টার দিকে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে ঢাকাগামী আন্তঃনগর তিস্তা এক্সপ্রেসে পাথর নিক্ষেপে দুইজন আহত হন। ২৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ঢাকাগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে পাথর নিক্ষেপে জহুরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী আহত হন। একই দিনে খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনেও পাথর নিক্ষেপের শিকার হয় আক্কেলপুর।

একই বছরের ৫ মে রাজশাহীগামী রকেট মেইল ট্রেন ঈশ্বরদী স্টেশনের প্রবেশের আগে পাথর নিক্ষেপের শিকার হলে জুঁথি আক্তার (১৩) নামে এক কিশোরী আহত হয়। ৪ মে পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে জামতৈল মুলাডুলি এলাকায় পাথর নিক্ষেপে ৫ বছরের ইশানসহ দুই শিশু আহত হয়। ২ মে রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস বিভিন্ন স্থানে পরপর তিন বার পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে জামতৈল স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বীকে বহনকারী রংপুর এক্সপ্রেসে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল বেনাপোল কমিউটার ট্রেনের পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) পাথর নিক্ষেপে গুরুতর আহত হন। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক মাস পরে মারা যান।

২০১৭ সালে সারা দেশে প্রায় দেড় শতাধিক পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় দুই শতাধিক যাত্রীসহ ১৪ জন রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী আহত হয়েছেন। গত বছর ১৯ নভেম্বর মালবাহী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপে গার্ডসহ ৬ জন নিহত হয়। গত ৫ বছরে প্রায় ২ হাজার বার ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় ট্রেনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

২০১৩ সালে চট্টগ্রামে প্রীতি দাস নামে এক প্রকৌশলী পাথরের আঘাতে নিহত হন। গত বছর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উত্তরাঞ্চলে ভ্রমণের সময় তাকে বহনকারী ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। গত ৭ জানুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুবর্ণা এক্সপ্রেসে কুমিল্লায় পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় চার যাত্রী আহত হন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় যেসব যাত্রী গণপরিবহের তুলনায় ট্রেনকে নিরাপদ ভেবে যাতায়াত করেন। তাদের মধ্যে আতংক সৃষ্টি হচ্ছে। রেলওয়ে কতৃর্পক্ষ কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বাড়ছেই। দিন দিন অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে ট্রেনে যাতায়াত। প্রতিটি ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তৎপরতা দেখালেও কিছু দিন পরে নিরব হয়ে যায়। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতংক নিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি বলেন, দুষ্কৃতিকারীরা চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করে নিরাপদ বহনকে অনিরাপদ করে তুলছে। রেলের ব্যাপক ক্ষতি করছে ও মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র কিনা তা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। শনাক্ত করতে পারছে না কারা পাথর নিক্ষেপ করছে।

তিনি আরও বলেন, রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। তবে পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। যদিও এসব আইনে কারো শাস্তির কোনো নজির নেই।

এমআইএস/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।