জমে উঠেছে ফুটপাতের ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২২ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০২১

দেশে করোনাভাইরাসের দাপট কমে এসেছে। এর মধ্যে কয়েকদিন পর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। তার আগে শেষ ছুটির দিনে রাজধানীর ফুটপাতগুলোতে বেচাকেনা বেশ বেড়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনায় বেশ মুখর ফুটপাতগুলো। মার্কেটের চেয়ে ফুটপাতেই যেন এখন ভিড় বেশি।

শুক্রবার (৮ অক্টোবর) রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা ও মার্কেটের আশপাশের ফুটপাতগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সবখানেই কয়েকদিন আগের করোনার সময়ের তুলনায় যথেষ্ট ভিড়। কিছুদিন আগের সুনশান অবস্থা এখন নেই বললেই চলে।

রাজধানীর মৌচাক, শান্তিনগর, বেইলি রোড, তালতলা ও মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দুপুরের পর থেকেই ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়তে শুরু করে। বিকেল হতেই এসব এলাকার ফুটপাতগুলোতে ঠেলাঠেলি করে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে মৌচাক ও তালতলা মার্কেট এলাকার ফুটপাতগুলোতে ভিড় অনেক বেশি।

বিক্রেতারা বলছেন, সনাতন সম্প্রদায়ের বড় অনুষ্ঠানের কারণে বাড়তি ক্রেতা আসছে। এছাড়া স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ায় অনেকেরই পোশাক–আশাকসহ নানা সামগ্রীর প্রয়োজন হচ্ছে। এজন্য ক্রেতা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। যদিও কিছু বিক্রেতার দাবি, ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়লেও বিক্রি খুব বেশি বাড়েনি। ফুটপাতের বাজারে ক্রেতারা দীর্ঘক্ষণ ধরে দরদাম করে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে আর্থিক পরিস্থিতি নাজুক থাকায় কেনার পরিমাণ বেশ কমেছে বলে অভিযোগ কিছু কিছু বিক্রেতার।

jagonews24

তালতলায় সিটি করপোরেশন মার্কেটের ফুটপাতে প্যান্ট বিক্রি করেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘ সময় অনেকে ঘরে থাকায় কেনাকাটা করেনি। এখন বাইরে বের হচ্ছে। কিছুটা কেনাকাটা করছে। যা বিক্রি হচ্ছে তাতে আমরা অনেকদিন পর লাভের দেখা পাচ্ছি।’

নারীদের পোশাক বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম জানান, দিদিরা মার্কেটে আসছেন পূজার পোশাক কিনতে। আবার অনেকে দীর্ঘ সময় পর ঘুরতে যাচ্ছেন। তারা নানা ধরনের পোশাক নিচ্ছেন। অনেকে গ্রামে যাওয়ার জন্য শীতের পোশাকও খুঁজছেন বলে জানান তিনি।

মৌচাক ও আনারকলি মার্কেটের মাঝের ফুটপাতে বেশ ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সেখানে বিক্রেতাদের কথা বলার সময় নেই। এর ফাঁকে এক কসমেটিকস বিক্রেতা বললেন, আগে দোকান চালিয়ে লোকসান হতো। দেড় বছর বসে বসে কাটিয়েছি। এখন বিক্রি খুবই ভালো।

মৌচাক থেকে মালিবাগের রাস্তার ফুটপাত প্রায় পুরোটা নানা পণ্যের সমাহার দিয়ে সাজানো। সেখানে শোভন নামের এক ব্যাগ বিক্রেতা বলেন, লকডাউনের পুরো সময় পুরান মালামাল বিক্রি করেছি। বিক্রিই ছিল না। স্কুল খুলে দেওয়ার পর থেকে সবসময়ই দোকানে কাস্টমার আসছেন।

jagonews24

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে জুতা বিক্রি করেন মইনুদ্দিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘যতটা আশা করেছিলাম, তার চেয়ে অনেক বেশি ক্রেতা আসছে। কিন্তু টানা লোকসানের কারণে এবার বেশি মালামাল আনার ভরসা পায়নি। যোগানও নাই, তাই বিক্রি কম হচ্ছে। অনেক ক্রেতা আসছেন কিন্তু সাইজ না থাকায় বিক্রি করতে পারছি না।’

ক্রেতাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর কাজে বের হওয়ার কারণে প্রয়োজনের তাগিদেই পোশাক ও অন্যান্য জিনিস কিনতে হচ্ছে মানুষের। কিন্তু লকডাউন পরবর্তী সময়ে আর্থিক সক্ষমতা কমায় বেশ হিসাবনিকাশ করে কিনছেন ক্রেতারা।

বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে অনেক দিন পর শপিংয়ে বেরিয়েছি। কিন্তু বাজেট কম। এজন্য ফুটপাতে যদি কমের মধ্যে ভালো জিনিস পাওয়া যায় সেই চেষ্টা করছি। অন্যথায় বাধ্য হয়ে মার্কেটে যেতে হবে।

jagonews24

সালমা নামের এক পোশাককর্মী বলেন, প্রায় বছরখানেক পরে গ্রামের বাড়ি যাবো। পরিবারের সবার জন্য কিছু না কিছু কেনা দরকার। কিন্তু বাজেট কম, তাই ফুটপাতেই কেনাকাটা করতে হচ্ছে।

রাতুল দাস নামের এক ক্রেতা বলেন, পূজায় অনেক কাপড় লাগবে। মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরতে হবে। কিন্তু অতো টাকা নেই। এজন্য ঘুরে ঘুরে কম দামে ভালো জিনিস কিনতে চাচ্ছি।

এনএইচ/এআরএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।