স্বাস্থ্য সুরক্ষা-শৃঙ্খলার স্বার্থেই হজক্যাম্পে কড়াকড়ি
করোনার কারণে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে এবং ক্যাম্পের ভেতরে সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থেই কড়াকড়ি আরোপ করেছে আশকোনার হজ অফিস কর্তৃপক্ষ। হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে কড়াকড়িও। ভেতরে যেতে পারছেন না কোনো আত্মীয়স্বজন।
রোববার (১২ জুন) হজক্যাম্পে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
গত ৫ জুন ৪১০ হজযাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম হজ ফ্লাইট। এরপর থেকে ৮ জুনের আগ পর্যন্ত হজযাত্রীদের নিয়ে প্রতিদিন একটি করে ফ্লাইট ঢাকা ছাড়ে।
হজযাত্রার শুরু থেকেই অফিসের অভ্যন্তরে প্রবেশ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন কর্তৃপক্ষ। কে কী কারণে প্রবেশ করছেন তার উপযুক্ত কারণ দর্শাতে না পারলে অফিসের অভ্যন্তরে প্রবেশে অনুমতি দিচ্ছে না প্রশাসন। ৮ জুন থেকে শুরু হয় হজের বেসরকারি ফ্লাইট। এরপর থেকে কড়াকড়ি আরও বেড়ে যায় ক্যাম্পে।
হজক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন হজযাত্রীদের আত্মীয়স্বজন। হজযাত্রী, প্রশাসন, ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক, হজ এজেন্সির প্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী ও হজ সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি ছাড়া কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারছেন না। এদিন ভোর থেকে শুরু করে সারাদিনে ৫টি ফ্লাইটের সিডিউল রয়েছে।
জানা গেছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাকি দিনগুলোতেও নিয়মিত ৪ থেকে ৫টি ফ্লাইট হজযাত্রী পরিবহন করবে। বেশি ফ্লাইট পরিচালিত হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যাও বেড়েছে। এজন্য হজক্যাম্প কেন্দ্রীক ভিড়ও বেশি। তাই অফিসের ভেতরে বাড়তি মানুষের সমাগম ঠেকাতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ।
এদিন হজ অফিসের ভেতরে নজরুল ইসলাম নামে পঞ্চাশোর্ধ এক তাবলীগ জামাতের সদস্যকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। একাধিকবার হজ করেছেন তিনি। হজ ক্যাম্পের ভেতর তার কোনো কাজ নেই। তবুও তিনি ঘোরাঘুরি করছেন। মাঝে মাঝে দু/একজন হজযাত্রীর সঙ্গে কথাও বলছেন।
এখানে কেন ঘোরাঘুরি করছেন- জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বাইরে আমাদের তাবলীগ জামাতের সদস্যরা রয়েছেন। যদি কর্তৃপক্ষ অনুমতি দেয় তবে আমরা ভেতরে প্রবেশ করবো।
কী কারণে ভেতরে যেতে চান- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কাকরাইল থেকে এসেছি। আগে কাকরাইল মসজিদ থেকে একটি হজ ইউনিট আশকোনার হজক্যাম্পে আসতো। তারা হজযাত্রীদের হজবিষয়ক সব প্রশিক্ষণ ও শিক্ষা দিতো। যার জিম্মাদার ছিলেন মাওলানা মোহাম্মদ উল্লাহ। কিন্তু এখন তা বন্ধ আছে। আমাদের অনুমতিও দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হজক্যাম্পের পরিচালক যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা হজযাত্রীদের সব ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছি। নামাজের পর হজক্যাম্প মসজিদের ইমাম কী কী করতে হবে সে বিষয়ে সবাইকে শিক্ষা দেন। এছাড়াও জেলাভিত্তিকও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এজেন্সি গুলোকেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে বলা আছে। সুতরাং হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণের কোনো ঘাটতি হচ্ছে না। তাবলীগ জামায়াতের তারা যে প্রশিক্ষণটা দিতে চাচ্ছেন, তা হজযাত্রীরা পেয়ে যাচ্ছেন।
রোববার দুপুরের দিকে হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন এক হজযাত্রী। তার এক আত্মীয়ের জন্য হজ অফিসের ভেতরে প্রবেশের কার্ডের দাবি জানান পরিচালকের কাছে। কিন্তু পরিচালক জানিয়ে দেন ‘সেটা সম্ভব না’। সেসময় ওই হজযাত্রী নিজেকে বাংলাদেশ বিমানের স্টাফ পরিচয় দেন। পরে পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আপনার যা যা প্রয়োজন আছে, আপনি আমাকে বলুন। আমাদের নিজেদের লোকজন আছে। হজ অফিস, ধর্ম মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ বিমান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী- সবদিক থেকেই আপনাদের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট লোকজন আছে। যা প্রয়োজন আমাদের বলবেন। কিন্তু বাইরের কাউকেই প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। কারণ, আপনাকে দেখেও অনেকেই প্রবেশ করতে চাইবেন। তখন ভেতরে ভিড় শুরু হবে।
হজ অফিসের কড়াকড়ি নিয়ে পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এখানে যথেষ্ট লোকবল আছে। প্রত্যেকেই হজযাত্রীদের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে নিয়োজিত। যার যা প্রয়োজন সব জানালেই আমরাই ব্যবস্থা করবো। করোনার ঝুঁকি এখনো আছে। বিমানবন্দর থেকেও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসলে তাৎক্ষণিক ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাও আছে। এখনো সৌদি সরকার কড়াকড়ি আরোপ করে রেখেছে। তাই আমরাও যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো অতিরিক্ত লোকজন ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত মানুষ হলে ভেতরে শৃঙ্খলার ব্যাঘাত ঘটে। আমরা সেদিকটাও বিবেচনায় নিয়েছি। ডরমেটোরিতে শুধুমাত্র হজযাত্রীরা প্রবেশ করবেন। আর অফিসের অভ্যন্তরে নিচতলা পর্যন্ত একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো বাড়তি লোক প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
এ বছর বাংলাদেশে থেকে ৫৭ হাজার ৫৮৫ জন হজের সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫৩ হাজার ৫৮৫ জন যাবেন। শনিবার (১১ জুন) রাত ১২টা পর্যন্ত প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যমতে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এ পর্যন্ত ভিসা হয়েছে ৩ হাজার ৪১৫ জনের ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ভিসা পেয়েছেন ১১ হাজার ৩ জন। গত ৫ জুন থেকে ১১ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৯টি ফ্লাইটে মোট ৩ হাজার ৬৯৩ জন যাত্রী হজে গেছেন। এছাড়াও সৌদি এয়ারলাইন্সের ৪টি ফ্লাইটে ১ হাজার ৪৮৩ জন, ফ্রাইনাস এয়ারলাইন্সের ২টি ফ্লাইটে গেছেন ৮৩৭ জন। ১৫টি ফ্লাইটে মোট ৬ হাজার ১৩ জন যাত্রী হজে গেছেন।
এমআইএস/ইএ/এএসএম