চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:০৪ পিএম, ২৪ জুলাই ২০২২

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। আমাদের রিজার্ভ কমে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগ অংশ জ্বালানি তেল ক্রয়েই ব্যয় হয়।

রোববার (২৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ: কতটা ঝুঁকিপূর্ণ?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রবন্ধ উপস্থাপনায় তিনি এসব কথা বলেন।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, সরকার বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হচ্ছে। কিন্তু মূল সমস্যা আমদানিনির্ভর হওয়া। সরকার উৎপাদনমুখী হয়নি। রিজার্ভ কমার যে পরিস্থিতি চলছে, সেটা আরও কমবে। যে মূল্যস্ফীতি এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা আরও বাড়তে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্করণ, রাজস্ব আহরণ ও ঋণখেলাপির দিকে আরও নজর দিতে হবে সরকারকে।

তিনি বলেন, বর্তমান সংকট স্বল্পমেয়াদি নয়। এটা মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সঙ্কটের দিকে যাবে। কার্যকরী পদক্ষেপ খুঁজে বের করতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনা, বর্ধিত রাজস্ব উৎপাদন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচি বৃদ্ধি করা।

‘আইএমএফ বলেছে, ২০২৩ সালেও অর্থনৈতিক সঙ্কট থাকতে পারে। সেখানে শ্রীলঙ্কার অবস্থা বেশি খারাপ বলা হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান কিছুটা ভালো হলেও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারকে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে।’

‘বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় আমাদের শুধু আমদানি করা এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ওপর নির্ভর করা কঠিন হবে। অভ্যন্তরীণ শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতের জন্য নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। অবিলম্বে পুরোনো সাইটগুলোতে গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যবস্থা প্রয়োজন। সরকারকে উপলব্ধি করা উচিত যে, নবায়নযোগ্য শক্তি বর্তমান জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক সঙ্কটে শক্তি বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।’

বিশ্বব্যাপী মাঝারি মেয়াদের জ্বালানি সঙ্কট রয়েছে জানিয়ে ফাহমিদা বলেন, এটি অব্যাহত থাকতে পারে অনেকদিন। বাংলাদেশ অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেল এবং এলএনজি জ্বালানি আমদানিতে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও দ্বিপাক্ষিক উৎস যেমন: সৌদি আরব কুয়েত, কাতার থেকে ঋণ নিতে পারে।

 

jagonews24

অস্বাভাবিক খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির কথা বলছে। বাস্তবে মুদ্রাস্ফীতির হার অনেক বেশি। বিশেষ করে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। এটি প্রকাশিত সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি হারের তুলনায় অনেক বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন অনেক খাদ্যপণ্য রয়েছে যার দাম বৃদ্ধি ৫০ শতাংশের বেশি। ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর আরও বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দারিদ্র্য কমানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বর্ধিত করা প্রয়োজন। আমরা দেখি, নানা দুর্নীতির কারণে যাদের সামাজিক নিরাপত্তায় আসা উচিত তারা আওতাভুক্ত হন না। সামষ্টিক অর্থনীতি বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। সেগুলো মোকাবিলা করতে হলে, আমাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। ব্যষ্টিক পরিমণ্ডলে অবিচারের একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। করোনার কারণে নতুন দরিদ্র তৈরি হয়েছে। এতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) এক ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কেবল এককেন্দ্রিক উন্নয়ন নীতি দিয়ে এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যাবে না। মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে মানুষের ওপর অবিচারের প্রবণতা দূর করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে দারিদ্র্যের সঙ্গে যোগ হলো বৈশ্বিক সমস্যা। এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারলেও আমাদের দেশের যে বাজারব্যবস্থা, মাইক্রো লেভেলে তো অবস্থা আরও খারাপ। শ্রীলঙ্কায় সামষ্টিকভাবে অবস্থা হয়তো খারাপ, তবে মাইক্রো লেভেলে ভালো রয়েছে।

ব্যাংক খাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ খাতে সংস্কার না করে সেখানে পরিচালনা পর্ষদে সংখ্যা বৃদ্ধি ও ব্যাংকের সংখ্যা বাড়িয়ে সঙ্কট বাড়ানো হয়েছে। ভুল নীতির প্রভাবেই এমনটা হয়েছে। অর্থপাচার রোধ, খেলাপি ঋণ আদায় ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে যেকোনো সিদ্ধান্তে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানো উচিত। শ্রীলঙ্কায় যে সংকট তৈরি হয়েছে, আমাদের দেশে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সেটি আগেই অনুধাবন করতে পেরেছেন। এটা অনেকটা আশাব্যঞ্জক।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ম তামিম বলেন, জ্বালানি বৃদ্ধির ফলে শুধু বিদ্যুৎ নয় সবক্ষেত্রেই এর প্রভাব পড়েছে। আমাদের মূল সমস্যা ছিল প্রাথমিক জ্বালানিতে না যাওয়া। এতদিন এটা বলে আসছিল, এখন এই সমস্যাটাই দেখা দিয়েছে। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তিন বছর বা পাঁচ বছর রাখার ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু এখনো সেটা চলছে, তাও ২৪ ঘন্টা। এর ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ার ফলেই আরও সঙ্কট তৈরি হয়েছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় আজ আলোচনায় অংশ নেন সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী প্রমুখ।

আরএসএম/এমপি/এমআরএম/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।