রাজনৈতিক দলের সংলাপে ৩১৯ প্রস্তাব পেল ইসি

সিরাজুজ্জামান
সিরাজুজ্জামান সিরাজুজ্জামান , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৫৫ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২২
সংলাপে সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা

নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে দেশের বৃহত্তর দল বিএনপি অংশ না নেওয়ায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ, পরিস্থিতি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এ সংশয় খোদ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এসেছে। যে দলগুলো সংলাপে অংশ নিয়েছে তাদের কাছ থেকে ৩১৯টি প্রস্তাব পেয়েছে ইসি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ৪০টি দাবি জানিয়েছে।

রোববার (৩১ জুলাই) বিকেলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সংলাপের পর্ব শেষ হয়েছে। ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯ রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৮টি অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ ৯টি দল অংশ নেয়নি। আর দুটি দল নতুন করে সময় চেয়েছে। এই দুটি দলের সঙ্গে পরে সংলাপে বসবে ইসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর জাগো নিউজকে বলেন, যে দুটি দল সময় চেয়েছে তাদের সময় দেওয়া হবে কি না তা কমিশন বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমরা সব দলের সঙ্গে সব সময় আলোচনা করতে আগ্রহী।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- নির্বাচনকালীন সরকার, ইভিএম, নির্বাচনকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো ইসির অধীনে রাখা, ভোটের অনুপাতে সংসদীয় আসন বণ্টন, বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনা মোতায়েন এবং প্রবাসীদের ভোট দানের ব্যবস্থা।

এছাড়া নির্বাচনের বাইরে জনসম্পৃক্ত বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর সেটি হরো জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে ভোগান্তি। বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারও স্বীকার করেছেন। এমনকি ভোগান্তি কমানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে চিঠিও দেওয়া হয়।

jagonews24সংলাপে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি

কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর বেশির ভাগই জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে। তবে আওয়ামী লীগ তিনশ আসনেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোট করার দাবি জানিয়েছে। সংলাপে অংশ নেওয়া ২৬ দলের মধ্যে ১৯টিই নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এদের কেউ কেউ ইভিএমের বিপক্ষে, কেউ আবার আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ব্যবহার, কেউ শুধু স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ইভিএম চায় না বলে জোর দাবি করেছে।

অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছে ১৮টি দল।

সংলাপে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়ে বলেছেন, সব বিরোধী রাজনৈতিক দল অনেকগুলো যৌক্তিক কারণে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। জনগণের বড় অংশ ইভিএমকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। জনগণ ইভিএমকে ডিজিটাল কারচুপির বাক্স মনে করে।

এছাড়াও নানান শঙ্কার কথা জানিয়ে ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। তবে এর মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন শর্ত সাপেক্ষে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলেছে, ইভিএম ব্যবহার করতে হলে পেপার অডিট ট্রেইল সংযুক্ত করতে হবে।

সরকারের শরীক দল রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশনও বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন চেয়েছে। তারা ভোটের সময় স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসির হাতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যমান নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় জাতীয় পার্টিও।

যে ৯টি দল সংলাপে অংশ নেয়নি

বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমল, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। এছাড়া আগস্টের পরে সংলাপের জন্য সময় দিতে পারবে বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টি-জেপি। আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কারণে পরবর্তী সময়ে সময় চেয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি।

jagonews24সংলাপের শেষ দিনে যায় আওয়ামী লীগ

২৮ দলের কাছ থেকে এসেছে প্রায় ৩১৯ প্রস্তাব

ইসির সংলাপে অংশ নেওয়া ২৬টি দল থেকে প্রায় ৩১৯টি প্রস্তাবনা এসেছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ সুনির্দিস্ট সংখ্যা দিলেও কোনো কোনো দল আবার তা করেনি। এদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম দিয়েছে ১৩ দফা সুপারিশ, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ বেশ কয়েকটি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ১৬ দফা, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৯ দফা, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) বেশ কয়েকটি, খেলাফত মজলিসের ৪ দফা, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২০ দফা, ইসলামী ঐক্যজোটের ১১ দফা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ১৫ দফা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের (এমএল) ৯ দফা, গণতন্ত্রী পার্টির ৫ দফা, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১৩ দফা, গণফ্রন্টের ২২টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ৪০ দফা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের ১২ দফা, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৯ দফা, বাংলাদেশ মুসলীম লীগের ১৯ দফা রয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ১২ দফা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের ১১ দফা, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের ৭ দফা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ১৬ দফা, জাকের পার্টির ৪ প্রস্তাব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বেশ কয়েকটি, গণফোরামের ১০টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপের ১১ দফা, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ১১ দফা, আওয়ামী লীগের ১৪টি এবং জাতীয় পার্টির ৪টি প্রস্তাব রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, সব দলের প্রস্তাবগুলো বিবেচনার জন্য পর্যালোচনা করবেন। এগুলো ফেলে রাখবেন না। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যাবতীয় পদক্ষেপ নেবেন। সংলাপে পাওয়া প্রস্তাবগুলো দলীয় প্রধানদের কাছেও পাঠানোর পাশাপাশি সরকারের কাছেও পৌঁছে দেবেন।

ইসি গঠনের পর ১৩ মার্চ দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী, ২২ মার্চ নাগরিক সমাজ, ৬ এপ্রিল প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক, ১৮ এপ্রিল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী, প্রধান বার্তা সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক, ৯ জুন নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধি এবং ১২ জুন নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে মতবিনিময় করে কমিশন।

এছাড়া প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে এরই মধ্যে মতবিনিময় করেছে কমিশন। এছাড়া ইভিএম প্রদর্শন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও কারিগরি বিষয়ে প্রশ্নোত্তর, মতবিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ১৯, ২১ ও ২৮ জুন তিন বসেছিল কমিশন। সেসব মতবিনিময় সভায় ২৮টি দল অংশ নেয়। বাকি ১১টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি।

এইচএস/এমএইচআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।