পাহাড়ি নানা পদের খাবার নিয়ে ঢাকায় ‘ইন্ডিজিনাস ফুড ফেস্টিভ্যাল’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:০১ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২২

‘মুরগি হরবো’, ‘গরুর গুদেয়ী’, ‘শুঁটকি হেবাং’, ‘সান্যে-পিদে’, ‘বালাচাও’- ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এমন সব বাহারি খাবারের পদ নিয়ে রাজধানীতে শুরু হয়েছে ‘ইন্ডিজিনাস ফুড ফেস্টিভ্যাল’। ভিন্ন কায়দায় রান্না এসব পাহাড়ি খাবারর ছাড়াও ফেস্টিভ্যালে পাহাড়ি নানা জাতের শাকসবজি, ফলমূলের দেখা মিলছে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) মিরপুরে প্রথমবারের মতো ‘ইন্ডিজিনাস ফুড ফেস্টিভ্যাল’র আয়োজন করেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাতীয় পর্যায়ের অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আইপিনিউজ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নাগরিক উদ্যোগ।

দিনব্যাপী এই উৎসব মিরপুর-১৩ নম্বরের বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ (বিআরটিএ আফিসের বিপরীতে) প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সকাল ১০টায় বনফুল আদিবাসী ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো উৎসবের উদ্বোধন করেন। এসময় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য ও বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজের রেক্টর অধ্যাপক বাঞ্ছিতা চাকমা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন ছাড়াও সংগঠনটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নৃগোষ্ঠীর খাবার নিয়ে আয়োজন হলেও এটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মারফত জানতে পেরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই ফেস্টিভ্যালে আসছেন। দর্শনার্থীরা ‘ব্যাম্বু চিকেন’, ‘কাঁকড়া’সহ বিভিন্ন পিঠার স্বাদ নিয়েছেন। অনেকে আবার বাসার অন্যান্য সদস্যদের জন্য আদিবাসীদের তৈরি খাবার কিনছেন।

পাহাড়ি খাবার খেয়ে রওশন আরা নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘ওরা (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ) মনে হয় মশলা কম ব্যবহার করেন। ফেসবুকে দেখে এসেছি। ওদের খাবার, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারছি। খুব ভালো লাগছে। বাসার জন্যও কিছু খাবার নিয়ে যাবো ভাবছি।’

ফেস্টিভ্যালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের উৎপাদিত বিভিন্ন ফল, শাকসবজির স্টলেও ভালো ভিড় ছিল। পাহাড়ি কলা, কচু, বাঁশ কোড়ল, শাক, আনারস কিনতে রীতিমতো ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

সেখানে কথা হয় সাংবাদিক সতেজ চাকমার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের খাবার নিয়ে সমতলের মানুষের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকের ধারণা আদিবাসীরা শুধু সাপ, ব্যাঙ খায়। এ ধরনের হেয় ধারণা সমাজ থেকে মুছে ফেলা প্রয়োজন। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের যে সৌন্দর্য, খাবারে যে বৈচিত্র, এটা ছড়িয়ে দিতে চাই।’

ফেস্টিভ্যালে অনেকগুলো স্টল বসেছে বাহারি পণ্য নিয়ে। একটি স্টলের বিক্রেতা দিপন বলেন, ‘ফেস্টিভ্যালে কাঁকড়া ভুনা, মুন্ডি, পাজন, ব্যাম্বু চিকেন, ব্যাম্বু ফিশ- এগুলো বিক্রি করছি। আমাদের খাবারের যে সংস্কৃতি সেটা আসলে মেইনস্ট্রিম থেকে আলাদা। এসব খাবার সঙ্গে সাধারণ মানুষের পরিচয় করিয়ে দিতেই এই আয়োজন।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির আঁচ পাহাড়ি খাবারেও লেগেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিরপুরে আমার একটি রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে ক্রেতা কমেছে। সবকিছু বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। সে কারণে ক্রেতাকেও বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। ক্রেতা-বিক্রে উভয়কেই এটা মেনে নিতে হয়েছে। তবে এখন একটু ক্রেতা কমেছে বলেও জানান তিনি।’

আয়োজন সম্পর্কে নাগরিক উদ্যোগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাদিরা বলেন, ‘বাঙালি জনগোষ্ঠীর মাঝে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের খাবার নিয়ে বিভিন্ন ধারণা রয়েছে। ছোটবেলায় আমরা বইয়ে পড়েছি আদিবাসীরা শামুক, ঝিনুক, শাপ- এগুলো খেয়ে থাকে। এ ধরনের আয়োজন তাদের সংস্কৃতি ও তাদের জীবনধারা সম্পর্কে একটা বার্তা দেবে। এখানে সব অর্গানিক খাবার। এখান থেকে পাহাড়ি খাবার সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যাবে।’

এসএম/ইএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।