ইলিয়াস-বাবুলের বিরুদ্ধে মামলার এজাহারে যা বললেন বনজ কুমার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫১ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২
বনজ কুমার মজুমদার/ফাইল ছবি

সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ও সাবেক এসপি বাবুল আক্তারসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এ মামলার বাদী পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। এতে বাবুল আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান লাবু ও বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়াকেও আসামি করা হয়।

মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলার এজাহারে সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের ইউটিউব চ্যানেলে 'স্ত্রী খুন স্বামী জেলে, খুনি পেয়েছে তদন্তের দায়িত্ব' শিরোনামে ৪২.২১ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি ভিডিও ক্লিপ আপলোডের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন পিবিআই প্রধান।

আরও পড়ুন: স্ত্রী হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চার্জশিট

ইলিয়াস হোসাইনের ওই ডকুমেন্টারিতে বলা হয়, আাপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, মিতু খুন হওয়ার পর সবাই বলতে শুরু করেছিল, জঙ্গিরাই বাবুলের স্ত্রীকে খুন করেছে। কিন্তু এটা হয়তো সবার জানা নেই, জঙ্গির ইস্যুটি বনজ কুমারই পিবিআইয়ের মাধ্যমে সামনে এনেছিলেন। তার পরপরই সারাদেশে আলেমদের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। সাড়াশি অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৩ হাজার মুসলমানকে আটক করা হয়েছিল ওই চিরকুটকে কেন্দ্র করেই।

এ বিষয়ে যুক্তি খণ্ডিয়েছেন বনজ কুমার মজুমদার। মামলার অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, বাবুল আকতারই তার দাখিলকৃত এজাহারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন, হত্যাকাণ্ডটি জঙ্গিরা ঘটিয়েছেন। এর মাধ্যমে বাবুল পুলিশের আবেগকে কাজে লাগিয়ে মামলাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। আসামিদের বক্তব্যগুলো মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য উস্কানিমূলক।

সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ওই ভিডিওতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেটে স্বর্ণের গুদামে অভিযান চালায় বাবুল আক্তার। ওই অভিযানের খবর শুনে বনজ কুমার মজুমদার সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন বাবুল আক্তারকে। বাবুল আক্তার অভিযান বন্ধ করতে রাজি না হলে প্রথমে ৫০ লাখ থেকে শুরু করে সর্বশেষ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুসের প্রস্তাব দেন বনজ কুমার মজুমদার।

ইলিয়াস-বাবুলের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের মামলা

ইলিয়াস হোসাইন, বাবুল আক্তার ও বনজ কুমার মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে বনজ কুমার মামলার অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, উল্লেখিত অভিযানটি একটি গোয়েন্দা শাখার তথ্যের ভিত্তিতে হয়। তাদের উপস্থিতিতে সাবেক সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে ডিবি ও কোতোয়ালি থানা-পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এসআই (নিরস্ত্র) মো. আফতাব হোসেন বাদী হয়ে সিএমপি কোতোয়ালি থানায় ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বি ধারায় ৫১ নম্বর মামলাটি করেন।

‘মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক হাবিবুর রহমান তদন্ত শেষে ২০১৮ সালের ২৮ জুন কোতোয়ালি থানার অভিযোগপত্র নং-৫৪০ বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-বি আদালতে দাখিল করেন। উল্লেখিত অভিযানে বাবুল আক্তারের নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান ছিল না। তিনি এ মামলার বাদী, সাক্ষী কিংবা তদারকি অফিসারও ছিলেন না। শুধু তিনি অভিযানে শেষ মুহূর্তে হাজির হয় বলে শুনেছি। অধিকন্তু বর্ণিত ভিডিওতে প্রচারিত যে স্বর্ণ চোরাচালানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হলো ২০১৬ সালের ঘটনা। তখন আমি (বনজ কুমার মজুমদার) সিএমপিতে কর্মরত ছিলাম না। ২০১৫ সালের ১৭ জুন থেকে আমি ঢাকা মহানগর পুলিশে যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) হিসেবে কর্মরত ছিলাম’ বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন: ইলিয়াস-বাবুলের বিরুদ্ধে পিবিআইয়ের মামলা

সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের ওই ডকুমেন্টারিতে আরও বলা হয়, পুলিশের পিবিআই শাখাটিতে বনজ বললে দুইয়ে দুইয়ে চার আবার দুইয়ে দুইয়ে ছয়ও হয়। তদন্তের নামে নয়-ছয় করা পুলিশের শাখাটিতে বনজ কুমার মুকুটহীন এক সম্রাট।

এ বিষয়ে মামলার অভিযোগপত্রে পিবিআই প্রধান উল্লেখ করেন, ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর কার্যক্রম শুরু করার পর থেকেই পিবিআই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত অসংখ্য চাঞ্চল্যকর, রোমহর্ষক, ক্লুলেস মামলার গভীর ও নিবিড় তদন্ত করেছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মামলার মূল রহস্য উদঘাটন করে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করে  আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়।

‘পিবিআইয়ের এমন কর্মকাণ্ড দেশের আদালতসহ দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। এছাড়া পিবিআইয়ের সফলতার কথা প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়ে আসছে।’

তিনি বলেন, এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পিবিআইয়ের এসপি নাইমা সুলতানার ক্ষেত্রেও নিয়মটি এক। আসামি বাবুল আকতার তার হীন কর্মকান্ড অর্থাৎ সুস্থ মস্তিস্কে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী স্ত্রীকে খুন করেন। পরবর্তিকালে ঘটনাটিকে আড়াল করতে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন বক্তব্যের মাধ্যমে জনসম্মুখে আমার মানহানি ও পিবিআইয়ের মতো একটি বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস চালিয়েছেন।

মো. হাবিবুর রহমান লাবু (৪৫) ইলিয়াস হোসাইনের ওই ডকুমেন্টারিতে বলেন, ২০২১ সালের ১০ মে আমার বড় ভাই বাবুল আকতারের ওপর অমানসিক নির্যাতন চালিয়ে বিভিন্ন বইয়ের পাতায় ও সাদা কাগজে পিবিআইয়ের বলা কথা লিখতে বাধ্য করা হয়। এগুলো ছিল বনজ কুমারের সাজানো নাটক ও তিনি অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাবুল আকতারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।

‘বাবুল আক্তারের মোবাইল নম্বর থেকে গায়েত্রী বাবুল আকতারকে ২৯টি এসএমএস পাঠিয়েছিলেন ও সেসব এসএমএস মিতু দেখে ফেলাতেই দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।

এ বিষয়ে মামলার অভিযোগপত্রে বনজ কুমার বলেন, আসামি মো. হাবিবুর রহমান লাবু (৪৫) অপর আসামি বাবুল আকতারের হীন কর্মকাণ্ড আড়াল করতে আর এক আসামি ইলিয়াস হোসাইনের প্রচারিত ভিডিওতে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তারা জনসম্মুখে আমার মানহানি ও পিবিআইকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

পিবিআই প্রধান আরও বলেন, ওই ভিডিওতে বাবুল আকতারের একটি ফোনালাপ প্রচার করা হয়। যাতে বাবুল একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছেন মর্মে প্রচার করা হয়। কিন্তু অপর প্রান্তে কোনো ব্যক্তির বক্তব্য নেই।

‘এর মাধ্যমে সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, মামলার তদন্ত ও বিচারকার্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যেই অপর তিন আসামির প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্ররোচনায় ও সার্বিক সহযোগিতায় ১ নম্বর আসামি ইলিয়াস হোসাইন বিদেশে পলাতক থাকা অবস্থায় অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত হয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বক্তব্য দিয়ে বানানো একটি ডকুমেন্টারি গত ৩ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সময় ২০.৩৭ মিনিটে প্রচার করেন। এর মাধ্যমে জনসম্মুখে বাংলাদেশ পুলিশ, পিবিআই ও আমার মানহানি ঘটেছে।’

টিটি/আরএসএম/এএএইচ/এসএএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।