পাসপোর্টে বয়স কমানোর দাবি নিয়ে মন্ত্রী

১৬ কোটি মানুষের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করতে রাজি না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫১ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২

বিদেশে বৈধ হতে প্রবাসীরা পাসপোর্টে বয়স কমানোর আবদার করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

তিনি বলেন, প্রবাসীরা অন্যায় আবদার করছেন। এটি করলে বাংলাদেশের পাসপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। ১০ জনকে খুশি করার জন্য ১৬ কোটি মানুষের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করতে রাজি না।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ব্র্যাক মাইগ্রেশন মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ইতালি থেকে অভিবাসীরা বলছেন আমাদের সরকার নাকি পাসপোর্ট দিচ্ছে না। ওকে, আপনারা যতজন এখানে আছেন আমাকে বলেন- পাসপোর্টে একটা তথ্য ভুল হতে পারে, সব তথ্য তো ভুল হবে না। সব তথ্য ভুল দিয়ে তারা (পাসপোর্ট) চান।

তিনি বলেন, আমি চল্লিশ বছর বয়সে এসে যদি বলি (বয়স) ২০ বছর কমিয়ে দাও পাসপোর্টে- সেটা কি সম্ভব? এটা যদি আমরা করি, তাহলে বাংলাদেশি পাসপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় যাবে! তাই তো হচ্ছে, আর তাই আমরা করতে চাচ্ছি না। ১০ জনকে আমরা খুশি করার জন্য ১৬ কোটি মানুষের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি করতে রাজি না।

ইতালিতে অবৈধ অভিবাসীরা বড় সমস্যায় পড়বেন উল্লেখ করে ইমরান আহমদ বলেন, কদিন পর তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এটা তো হওয়া উচিত ছিল না।

মন্ত্রী বলেন, ট্রাভেল কোম্পানিগুলো অবৈধ অভিবাসন করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো অভিবাসীদের টিকিট, ভিসা দিয়ে ত্রিপলি পাঠাচ্ছে। যাতে করে তারা নৌকায় করে ইতালি যেতে পারে। এভাবেই হচ্ছে, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। যারা ১০ লাখ, ১২ লাখ, ১৫ লাখ টাকা দিয়ে রিক্রুটিং এজেন্টকে দিয়ে ইউরোপ পৌঁছে দিতে বলে। টাকা নিয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ২০-৩০ লাখ টাকা চলে যায়। কারণ জিম্মি করে টাকা আদায় করা হয়।

অবৈধ অভিবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এমনকি অবস্থা হয়েছে এই দেশে, কোথায় সমস্যা আছে যে লাখ লাখ টাকা খরচ করে মানুষ (অবৈধভাবে বিদেশ) যায়। এর যে দায় এটা তো কোনোদিন পূরণ হবে না। সারাজীবন স্লেভারি (দাসত্ব) করে খরচ তুলতে হবে। এটা নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

বিদেশে নতুন নতুন শ্রমবাজার খুলতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে ইমরান আহমদ বলেন, ইউরোপে আমাদের বড় শ্রমবাজার আছে। জাপান, কোরিয়াতেও সুযোগ আছে। আগামীতে চীনও অনেক বড় শ্রমবাজার হবে। চীনের জন্য আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। তাদের এক সন্তান, দুই সন্তান নীতি এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সেটা ধরার জন্য হয়তো আমাদের চার সন্তান পলিসি নেওয়া লাগতে পারে।

সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়েছে ও তাদের জন্য বীমার ব্যবস্থা করেছে বলেও জানান মন্ত্রী। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলমান কাজের জন্য শ্রমিকদের লাগেজ টানাসহ নানান ভোগান্তি হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

ইমরান আহমদ বলেন, যারা বিমানবন্দরে যান, আপনারা তো দেখেন আগে তো সোজা ঢোকা যেতো। এখন তো এইদিকে যাওয়ার.. ওইদিকে যাওয়ার.. আপনি জানেন না তো হারিয়ে যাবেন, আমি হারিয়ে যাই। আমরা গাড়ির ড্রাইভারটা ভালো, আমাকে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, দালালরা আমাদের কাছে বড় সমস্যা। দালালরা আসলে সাহায্যকারী, এদের কিন্তু একটা ফাংশন আছে। সেটা করতে গিয়ে তারা অভিবাসন খরচ বাড়ায়। এটাই সমস্যা। আমরা বায়রার সঙ্গে কাজ করছি। দালালদের নিবন্ধিত করার চেষ্টা করছি। তাদেরকে রিক্রুটিং এজেন্টদের মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হবে। অনথ্যায় আমরা রিক্রুটিং এজেন্ট কমাবো।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ এবং মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

আসিফ সালেহ বলেন, আমরা এমন একটি সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি যেখানে গুণগত মানসম্পন্ন তথ্য পাওয়া খুবই কঠিন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এ সময়ে চারদিকে প্রচুর হট্টগোল। কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল তথ্য সেটা খুঁজে বের করা এখন খুব কঠিন। এর মধ্যেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। যেখানে ভালো জবাবদিহিমূলক সাংবাদিকতার কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য মাইগ্রেশন সেক্টরে আমরা পুরস্কৃত করছি। আগামীতে ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে পুরস্কৃত করবো।

এসএম/কেএসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।