খুলনায় রিপন হত্যা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:২৭ পিএম, ০৬ অক্টোবর ২০২২

খুলনায় আলোচিত মাহেন্দ্র চালক শেখ ওহিদুর রহমান রিপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রনি শিকদারকে (২৬) গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বুধবার (৫ অক্টোবর) রাজধানীর লালবাগ থানার শহীদনগর এক নম্বর গলি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

রনি চট্টগ্রামের হালিশহর থানার আদ্দোপাড়া এলাকার আবদুর রউফ শিকদারের ছেলে। রনি নাম পাল্টে ‘জাহাঙ্গীর আলম’ ও ‘কলগার্ল বয়’ নামে দুটি আইডি দিয়ে বিভিন্নরকম টিকটক ভিডিও তৈরি করে তা আপলোড করতো।

বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় র‍্যাব ৭-এর মিডিয়া শাখা থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

র‍্যাব জানায়, খুলনার লবণছড়া এলাকার আলোচিত মাহেন্দ্র চালক শেখ ওহিদুর রহমান রিপন হত্যা মামলায় গত ২৯ মার্চ খুলনার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত রনি শিকদারসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

র‍্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, রনি শিকদার ও তার তিন বন্ধু মিলে ২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি গাড়ি ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় যায়। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তারা ৭০০ টাকায় একটি মাহেন্দ্র ভাড়া নেয়। গাড়িতে ওঠার পর কিছু দূর যেতেই মাহেন্দ্রটি ছিনতাইয়ের জন্য চালক রিপনকে ভয়ভীতি দেখায়। একপর‍্যায়ে রনি শিকদারসহ চারজন মিলে রিপনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে এবং গলার ভেতর ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে গাড়িতে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর খুলনার লবণচরা এলাকায় রাস্তার পাশে রিপনের মরদেহ ফেলে গাড়িটি নিয়ে তারা গোপালগঞ্জের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী পুলিশ রাস্তায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করে। সেখানে মাহেন্দ্রটির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে থামানোর সংকেত দেয় পুলিশ। এসময় তাদের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির বৈধ কাগজপত্র দেখতে চান পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু তারা কিছুই দেখাতে পারেনি। এছাড়া তাদের একেকজনের কথা একেক রকমের হওয়ায় পুলিশ সদস্যের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। একপর‍্যায়ে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে মাহেন্দ্র চালক রিপনকে হত্যা করে খুলনার লবণচরা এলাকার রাস্তার পাশে ফেলে দিয়ে গাড়িটি ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করে।

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই বাদী হয়ে খুলনার লবণচরা থানায় জড়িত চার বন্ধুর নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৯১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে সিআইডিও একই আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। প্রায় ৫ বছর বিচারকার্য শেষে চলতি বছরের ২৯ মার্চ আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়।

র‍্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, খুলনার রিপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ড আসামি রনি চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় অবস্থান করে এবং সে প্রায়ই ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা যাওয়া করে, এছাড়া মাঝে মধ্যে চট্টগ্রামে তার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যায়। এরপর গোয়েন্দা নজরদারি চালিয়ে রনি শিকদারকে ঢাকার লালবাগ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আটক হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে রিপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলে স্বীকার করেছে রনি। 

র‍্যাব কর্মকর্তা নূরুল আবছার বলেন, রনি দুই বছর পর জামিনে বের হয়ে আর আদালতে হাজির হয়নি। সে প্রথমে চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর কাজ করে। এর পর সেখান থেকে বের হয়ে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালানো শুরু করে। বর্তমানে রাজধানীর লালবাগ শহীদ নগর এলাকার একটি চুড়ির কারখানায় কাজ করতো এবং নিয়মিত টিকটক ভিডিও বানিয়ে ‘জাহাঙ্গীর আলম’ ও ‘কলগার্ল বয়’ নামে দুইটি আইডিতে আপলোড করতো। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ইকবাল হোসেন/এমএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।