সালাম নিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব
কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসএসসি পরীক্ষার্থী
রাজধানীর পল্লবীতে সিনিয়রদের সালাম না দেওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিব (১৬) গুরুতর আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের লিডারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক।
কিশোর গ্যাং সদস্যদের রাজধানীর মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতাররা হলেন- কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের প্রধান মো. রমজান (২০), আল আমিন (২০), ইসমাইল হোসেন ওরফে পপকন (১৮), বিজয় (১৭) ও মো. ইয়াসিন আরাফাত ওরফে সাইমন (১৭)।
ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মিরপুর পল্লবীর সি-ব্লকে সিনিয়রদের সালাম না দেওয়ায় চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থী রাকিবের ওপর হামলা করে কিশোর গ্যাং জুনিয়র গ্রুপের প্রধান রমজান তার সহযোগীরা। হামলাকারীরা পেছন থেকে রাকিবের পিঠের নিচের অংশে চাকু দিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় রাকিবের মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
তিনি বলেন, আহত অবস্থায় রাকিবকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হামলায় আহত হওয়ার আগে রাকিব পাঁচটি পরীক্ষা দিয়েছিল। ষষ্ঠ পরীক্ষার দিন হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়ে গেলেও পরীক্ষা চলাকালে সম্পূর্ণ অচেতন হয়ে যাওয়ায় তাকে পরীক্ষার হল থেকে আবারও হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, এ হামলায় রাকিবের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্তসহ শরীরের নিচের অংশ পুরোপুরি অবশ হয়ে গেছে। বর্তমানে সে হাসপাতালের সিসিইউ বিভাগে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন।
মোজাম্মেল হক বলেন, এ ঘটনায় রাকিবের বাবা আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় রমজান, আল আমিন, বিজয়, ছোট রমজান, পপকন ও হাসিবসহ অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। এছাড়া কিশোর গ্যাং গ্রুপের লিডার রমজান ও আল আমিনসহ জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন করে স্থানীয়রা। এরই ধারাবাহিকতায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব-৪।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীসময়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মিরপুর ও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, রাজধানীর পল্লবী এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে গ্যাং গড়ে উঠে। সেখানে সিনিয়র গ্রুপ ও জুনিয়র গ্রুপ নামে দুটি পৃথক কিশোর গ্যাং রয়েছে। যারা এলাকায় ইভটিজিং, ছোটখাটো ছিনতাইসহ মাদক সেবন ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে জড়িত। এ দুটি গ্রুপ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সার্বক্ষণিক হাঙ্গামায় জড়িয়ে থাকে। আহত রাকিব সিনিয়র গ্রুপের সদস্য। গ্রেফতাররা জুনিয়র গ্রুপের সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক ডিআইজি মোজাম্মেল হক
‘ঘটনার কয়েকদিন আগে জুনিয়র গ্রুপের সদস্য রমজান, আল আমিন, বিজয় ও ইয়াসিনসহ আরও পাঁচ থেকে ছয়জন মিলে মিরপুর-১২, ডি ব্লকে ধূমপান করার সময়ে পাশ দিয়ে সিনিয়র গ্রুপের কয়েকজন সদস্য যাচ্ছিল। ওই সময় জুনিয়র গ্রুপের সদস্যরা সম্মান প্রদর্শন না করায় সিনিয়র গ্রুপের সদস্যরা তাদের বিভিন্ন প্রকার হুমকিসহ ধস্তাধস্তি ও চর-থাপ্পড় মারে। পরে এ ঘটনার রেশ ধরে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে পল্লবীতে জুনিয়র গ্রুপের ১২ থেকে ১৫ জন সদস্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাকিবকে একা পেয়ে পথরোধ করে।এসময় রমজান হত্যার উদ্দেশ্যে রাকিবকে পেছন থেকে পিঠে উপুর্যপুরি চাকু দিয়ে আঘাত করে, আল আমিন, বিজয় ও ইয়াসিনসহ অন্যান্য সহযোগীরা তাকে চর, কিল-থাপ্পড় মেরে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয়রা রাকিবের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করায়। বর্তমানে ভিকটিম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার রমজান একই এলাকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করে। তার বাবা এলাকায় ফেরি করে মুরগি বিক্রি করে। রমজান সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এখন জুনিয়র কিশোর গ্যাং গ্রুপের প্রধান হিসেবে প্রকাশ্যে ইভটিজিং, ছিনতাই, মাদক সেবনসহ এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মারামারিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত। মাদকের অর্থ যোগানের জন্য নানাবিধ অপকর্মে লিপ্ত। গ্রেফতার আল আমিনসহ বাকিরাও একই গ্রুপের সক্রিয় সদস্য।
টিটি/আরএডি/এমএস