চিড়িয়াখানায় উন্মুক্ত হলো আরও ১৬ প্রাণী, সিংহ-পেলিক্যান দেখতে ভিড়

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩০ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২২

চিত্তবিনোদন আর পশুপাখি সম্পর্কে জানার অন্যতম মাধ্যম চিড়িয়াখানা এবং সাফারি পার্ক। রাজধানী ঢাকার মানুষের চিত্তবিনোদনের অন্যতম স্থান মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা। যদিও দর্শনার্থীদের জন্য সুযোগ সুবিধা ও পশু-পাখিদের পরিচর্যার অভাবসহ নানা অভিযোগ রয়েছে দেশের বৃহত্তম এ চিড়িয়াখানার বিরুদ্ধে। তবে প্রাণীর সংখ্যা ও দর্শনার্থী আগমনের বিচারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ আমাদের জাতীয় চিড়িয়াখানা।

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত এ চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীদের চাহিদা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানা আধুনিকায়নে কিছু নকশাও তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে নতুন নতুন প্রাণী আনা হচ্ছে। এরই মধ্যে পাঁচ প্রজাতির ১৬টি প্রাণী আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চারটি আফ্রিকান সিংহ, তিনটি পেলিক্যান, তিনটি ওয়াইল্ড বিস্ট, নেদারল্যান্ডসের দুটি ক্যাঙ্গারু ও চারটি লামা। দেশে আনার পর এসব প্রাণীকে ২১ দিন কোয়ারেন্টাইন শেষে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া চিড়িয়াখানায় থাকা বাঘ দম্পতি শিউলি-কদম পরিবারে ছয় মাস আগে জন্ম নেওয়া তিনটি শাবককেও আলাদা শেডে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, নতুন আনা সিংহ ও পেলিক্যান দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সরেজমিনে এ চিত্র পাওয়া যায়।

যাত্রাবাড়ী থেকে তিন সন্তান, স্ত্রী ও আত্মীয়-স্বজন নিয়ে চিড়িয়াখানায় আসেন মোয়াজ্জেম মিয়া। পেশায় ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম সময় পেলেই ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসেন। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় এসে দিনভর ঘোরাঘুরির পর বাড়ি ফিরছিলেন। এ সময় মোয়াজ্জেম মিয়ার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, শুনেছিলাম এখানে নতুন করে বেশকিছু বিদেশি প্রাণী আনা হয়েছে। তবে আমি শুধু ক্যাঙ্গারু দেখলাম, আর কিছু চোখে পড়েনি।

jagonews24

মোয়াজ্জেম মিয়া আরও বলেন, যেসব ক্যাঙ্গারু আনা হয়েছে তা অনেক ছোট। সেগুলো শেডের থেকে অনেক দূরে থাকায় ভালো করে দেখা যায় না। এক স্থানে তাদের চুপ করে বসে থাকতে দেখলাম। মনে হয় ঠিকঠাক মতো খাবার খায় না।

ক্যাঙ্গারু শেডের সামনে দেখা হয় বিলকিস (৪১) নামে এক নারীর সঙ্গে। বিলকিস তার সন্তানদের বলছিলেন, ‘জীবনে নিজ চোখে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারু দেখতে পাবো তা চিন্তা করিনি। তবে সারাজীবন বই আর টিভিতে যেমন দেখেছি বাস্তবে তা দেখতে পেলাম না। এগুলো এখানো বাচ্চা ও রোগা মনে হচ্ছে। তারপরও নিজ চোখে এমন প্রাণী দেখতে পেয়ে অনেক খুশি।’

এদিকে, আফ্রিকা থেকে আনা পেলিক্যান পাখি দেখতে দশনার্থীদের ভিড় বেশি ছিল। অনেকে প্রথমবারের মতো এই পাখি দেখতে পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। দর্শনার্থীদের কেউ ছবি তুলছিলেন, কেউ ভিডিও করছিলেন। কেউবা আবার সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছিলেন। অনেককেই আবার ভিডিও কলে প্রিয়জনদের সঙ্গে আনন্দ শেয়ার করতে দেখা যায়। ছোট ছোট শিশুরাতো পেলিক্যানের খাঁচার সামনে থেকে নড়তেই চাচ্ছিল না।

জিয়াম নামে এক শিশুর সঙ্গে দেখা হয় পেলিক্যানের খাঁচার সামনে। জীবনে প্রথম এই পাখিটি দেখেছে সে। টিভিতে দেখা পাখি বাস্তবে দেখে অনেক আনন্দ পেয়েছে জিয়াম। খুশিতে সে পাখিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছিল।

jagonews24

জিয়ামের মা হাফসা মানসু জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিমাসে একবার বাচ্চাদের নিয়ে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসার চেষ্টা করি। এখানে এলে তারা অনেক আনন্দ পায়। ওদের একটু আনন্দ দিতেই সারাদিন কষ্ট করে চিড়িয়াখানায় ঘুরে বেড়াতে হয়।

তিনি বলেন, চিড়িয়াখানা এখনো আগের মতো রয়ে গেছে। কিছু প্রাণী বাড়ানো হলেও এখানে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায় না। রোদ-বৃষ্টিতে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার সুযোগ নেই। দর্শনার্থীদের তুলনায় বসার স্থান কম হওয়ায় সেগুলো সহজে খালি পাওয়া যায় না। এ কারণে খোলা আকাশের নিচে বাচ্চাদের নিয়ে ঘাসে বসে বিশ্রাম নিতে হয়। যেহেতু রাজধানীতে বিনোদনকেন্দ্রের অনেক অভাব আছে, তাই যেগুলো আছে সেগুলোকে আধুনিক ও উন্নত করার পরাশর্ম দেন এই অভিভাবক।

এসব বিষয়ে চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দর্শনার্থীদের চাহিদার কথা ভেবেই চিড়িয়াখানায় নতুন নতুন প্রাণী আনা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দেশের পরিবেশ, আবহাওয়ার সঙ্গে আরেক দেশের পার্থক্য থাকায় এসব প্রাণীদের খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সমস্যা ও সময় প্রয়োজন হয়। যেহেতু এগুলো দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়ে থাকে, তাদের কিছু প্রশিক্ষণও দিতে হয়েছে।

তিনি বলেন, জাতীয় চিড়িয়াখানা আধুনিক করার কাজ শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নে কিছু নকশা তৈরি করা হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবও (ডিপিপি) তৈরি করা হয়েছে। শিগগির সেটা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

jagonews24

এদিকে, বাঘ দম্পতি শিউলি-কদমের ঘরে জন্ম নেওয়া তিনটি শাবকের মধ্যে দুটি তাদের সঙ্গে রয়েছে। জন্মের পর একটি শাবক অসুস্থ থাকায় তাকে আলাদাভাবে লালনপালন করা হচ্ছে। ওই বাঘ শাবকদের বয়স এখন ছয় মাস। দিনদিন তারা বড় হয়ে উঠছে। কিছুদিনের মধ্যেই তাদের আলাদা শেডে রাখা হবে। একটি শেডের মধ্যে আলাদাভাবে ব্যারিকেড দিয়ে দুইটি একসঙ্গে এবং আরেকটি আলাদা রাখা হবে।

এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার কিউরেটর মো. মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, জন্মের পর একটি বাঘ শাবক অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে। শাবকটি হাঁটতে পারতো না। মাটির সঙ্গে টেনে-হেঁচড়ে হাঁটার চেষ্টা করতো বলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে যায়। ওই শাবকটিকে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয়েছে। একসময় ফিডারে দুধ পান করানো হতো। এখন নিয়মিত গরুর মাংস খাওয়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, চিড়িয়াখানায় থাকা প্রতিটি প্রাণীকে সুস্থ রাখতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে। সেটি না করা হলে অসুস্থ বাঘ শাবককে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হতো না। সম্প্রতি বিদেশ থেকে আনা ১৬টি প্রাণীর মধ্যে ক্যাঙ্গারু ও পেলিক্যান খাবার খেতে চাচ্ছিল না। নানাভাবে তাদের এখানের খাবারে অভ্যস্ত করা হয়েছে। বর্তমানে সব প্রাণীই স্বাভাবিক খাবার খাচ্ছে। দর্শনার্থীদের বিনোদন বাড়াতে পেলিক্যানগুলোকে লেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তারা যাতে উড়ে যেতে না পারে সেজন্য কিছু পাখা কেটে দেওয়া হবে। লেকের মধ্যে এগুলো ছাড়া হলে ছোট-বড় সব বয়সী মানুষ ছবি তোলা, ভিডিও করাসহ নানাভাবে উপভোগ করতে পারবে।

jagonews24

দেশের সবচেয়ে বড় এ চিড়িয়াখানা ১৮৬ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিনোদনকেন্দ্রে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে আসেন হাজারো দর্শনার্থী। চিড়িয়াখানায় রয়েছে মাংসাশী আট প্রজাতির ৪২টি প্রাণী, ১৯ প্রজাতির বৃহৎ প্রাণী (তৃণতোজী) ২৭১টি ও ১৮ প্রজাতির ক্ষুদ্র স্তন্যপায়ী প্রাণী ১৯৮টি।

এছাড়াও রয়েছে ১০ প্রজাতির ৭২টি সরীসৃপ, ৫৬ প্রজাতির এক হাজার ১৬২টি পাখি, অ্যাকুয়েরিয়াম রক্ষিত আছে মৎস্যসহ প্রায় দুইশো প্রজাতির ৩ হাজার ৬৫টি প্রাণী। সবমিলিয়ে রয়েছে ১৬২টি পশু-পাখির খাঁচা।

এমএইচএম/কেএসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।