চারুকলায় বাঘ! সেলফি তোলার হিড়িক
চার বছরের ছোট্ট শিশু তাসভির। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের গেটে দাদা নজরুল ইসলামের হাত শক্ত করে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়েছিল। তাসভিরের অদূরে বিশাল আকৃতির একটি বাঘ মুখ হাঁ করে দাঁড়িয়ে। বাঘের সাথে ছবি তোলার জন্য তাসভীরের মা বার বার ছেলেকে বলছিলেন, ‘ভয় পেয়োনা বাবা, দাদা ভাইয়ের সাথে বাঘ মামার সামনে দাঁড়াও।’ তিনি যতই বলছিলেন ততই দাদাকে জাপটে ধরছিল ছোট্ট তাসভির। বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর মোবাইল ফোনে বাঘের সাথে দাদা-নাতির চিত্র ধারণ করে তৃপ্ত হলেন মা।
এমনই এক দৃশ্যের অবতারণা হয় আজ চারুকলার সামনের রাস্তায়। ইউএসএআইডির উদ্যোগে দুইবছর মেয়াদী ‘বাঘ অ্যাক্টিভিটি’ নামক কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে আজ চারুকলা অনুষদে বাঘের জন্য সারাদিন শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 
এ আয়োজনের অংশ হিসাবেই চারুকলার গেটের সামনে রাখা হয়েছে ‘টাইগার ক্যারাভেন’। এ ক্যারাভেন সহজেই পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। কমবেশি সবাই-ই বাঘকে সামনে রেখে সেলফি ও গ্রুপ ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
তবে টাইগার ক্যারাভ্যানের ভেতরে শুধুমাত্র ছোট শিশুদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। আয়োজকরা জানান, ভেতরে সুন্দরবনের রেপ্লিকা (বনজঙ্গল, পশুপাখি ও বাঘ ইত্যাদি) রয়েছে। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা ইউএসএআইডি বাঘ অ্যাক্টিভিটিজের জন্য এটি তৈরি করেছে।
চারুকলা অনুষদের ভেতরে গোটা এলাকাজুড়ে বাঘের প্রতিকৃতি, বাঘ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কনসার্ট ইত্যাদির মাধ্যমে বাঘ সংরক্ষণে নানা তথ্য-উপাত্ত দেয়ার কাজ চলছিল। ইউএসএআইডির কো-অর্ডিনেটর কমিউনিকেশন অ্যান্ড আউটরিচ (বাঘ অ্যাক্টিভিটি) মো. তানভীর হোসেন জানান, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সাত-আট বছর আগেও বাঘের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪শ থাকলেও সর্বশেষ পরিসংখ্যানে এ সংখ্যা এক তৃতীয়াংশের নীচে নেমে এসেছে। সুন্দরবনে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বাঘ হত্যা করায় ও বাঘের পছন্দের খাবার হরিণের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় বাঘ কমে যাচ্ছে; যা পরিবেশের জন্য হুমকি।
বাঘ সংরক্ষণে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইউএসএআইডি ‘বাঘ আমাদের গর্ব, বাঘ সংরক্ষণ করবো’ অর্থাৎ বাঘ অ্যাক্টিভিটি কার্যক্রম শুরু করেছে। দুই বছর মেয়াদী কার্যক্রমে দেশের সব কয়েকটি জেলায় বিশেষত সুন্দরবনের আশপাশের জেলায় বাঘ সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালিত হবে। বিশেষ ধরনের টাইগার ক্যারাভ্যান সারাদেশ ঘুরে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করবে। 
এ কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য সংঘবদ্ধ চক্র, যারা বাঘ হত্যার সাথে জড়িত তাদের প্রতিরোধের মাধ্যমে বাঘের সংখ্যা আর না কমতে দেয়া বলে জানান তানভীর হোসেন। 
বৃহস্পতিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে বাঘ অ্যাক্টিভিটির উদ্ভোধন করা হয়। অনুষ্ঠান বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিব, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ইউএসএইড মিশন প্রধান উপস্থিত ছিলেন।
এমইউ/এনএফ/এমএস