বাল্যবিয়ে বন্ধে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে ভিন্নধর্মী আয়োজন

করোনাকালে সারাদেশে বেড়েছে বাল্যবিয়ের হার। এসময়ে পরিবারের ইচ্ছায় বিয়ের পিঁড়িতে বসায় শিক্ষাজীবন শেষ হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর। স্কুল থেকে ঝরে গেছে বহু ছাত্র-ছাত্রী।
এ অবস্থায় করোনা-পরবর্তী স্কুলশিক্ষার্থী ঝরে পড়া হ্রাস এবং বাল্যবিবাহ ও শিশুশ্রম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের এক হাজার ৮৪৩ জন শিক্ষার্থী এবং তিন হাজার ৬৮৬ জন অভিভাবকসহ ২১টি বিদ্যালয়ে শর্ট ফিল্ম শো ও সচেতনতামূলক লিপলেট বিতরণ করেছে ‘রিডার ফাউন্ডেশন’ ও ‘টিচ ফর বাংলাদেশ’ নামের দুটি সংগঠন।
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সংগঠন দুটির যৌথ উদ্যোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে এ শিক্ষণীয় কার্যক্রম উপরিচালিত হয়।
জানা গেছে, এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে ৩১ জন টিচ ফর বাংলাদেশ ফেলো শিক্ষক তাদের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের একটি সচেতনতামূলক অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম দেখাযন, যেন তারা বাল্যবিবাহ এবং শিশুশ্রম সম্পর্কে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে পারে। ফেলো শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেছেন, যেন তারা যা শিখেছে সে সম্পর্কে বাবা-মায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এসব ব্যাপারে সংবেদনশীল হতে পারে।
কোভিড-১৯ মহামারিকালে বাংলাদেশে প্রচলিত বাল্যবিবাহ এবং শিশুশ্রম সমস্যার সামাজিক বোঝা আরও বেড়েছে জানিয়ে সংগঠন থেকে জানানো হয়, মহামারির সময় দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকার কারণে সারাদেশে বাল্যবিয়ের প্রবণতা কমপক্ষে ১৩ শতাংশ বেড়েছে। যা অনেক ক্ষেত্রে তথ্য-উপাত্তে আসেনি। ক্রমবর্ধমান আর্থিক সংকট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিনের ছুটি এবং সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বাল্যবিয়ের এ হার বাড়ার প্রধান কারণ।
আন্তর্জাতিক গবেষণা অনুসারে, করোনা মহামারিকালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন বাল্যবিয়ে হয়েছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অন্তত ১১ হাজার স্কুল শিক্ষার্থীকে পরিবারের ইচ্ছায় বিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মানে, এসব কোমলমতি শিশুরা এখন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ অনুযায়ী অপরাধের শিকার; যেখানে বলা হয়েছে বিয়ের উপযুক্ত হতে মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর এবং ছেলেদের ২১ বছর হতে হবে।
সারাদেশের স্কুলগুলোতে এ ভয়ংকর চিত্রটি প্রকাশ প্রায় যখন প্রায় দেড় বছর পর গত ১২ সেপ্টেম্বরে স্কুলগুলো পুনরায় চালু হয়। তখন শিক্ষকরা লক্ষ্য করেন যে, তাদের অনেক শিক্ষার্থী আর শ্রেণিকক্ষে ফেরেনি।
টিচ ফর বাংলাদেশের লিডারশিপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডেপুটি ডিরেক্টর মেহনাজ আজিজ জাগো নিউজকে বলেন, গ্রো ইওর রিডার ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এ সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রকল্প আমাদের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সমাজে বাল্যবিয়ে ও শিশুশ্রমের মতো ঘটনা বন্ধ করতে প্রভাবিত করবে। প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা এখন সবাই সচেতন এবং তাদের জীবনে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে তারা জানে কীভাবে এবং কার কাছে সহায়তা চাইতে হবে।
গ্রো ইউর রিডার ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও সাদিয়া জাফরিন বলেন, আমরা এ উদ্যোগটি নিয়েছি সমাজে একটি টেকসই পরিবর্তন আনতে এবং আমাদের শিক্ষার্থীদের উন্নত ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার লক্ষ্যে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে।
করোনা-পরবর্তীকালে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে নেওয়া এ জরুরি উদ্যোগ গ্লোবাল ইয়ুথ মবিলাইজেশন দ্বারা অর্থায়িত এবং বিগ সিক্স অর্গানাইজেশন, ইউনাইটেড নেশনস্ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালিত।
এএএম/এমকেআর/জিকেএস