বঙ্গবন্ধু টানেলে যান চলাচল করবে জানুয়ারিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৪৭ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০২২
ফাইল ছবি

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল যান চলাচলের জন্য জানুয়ারিতে খুলে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে টানেলের ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (২৬ নভেম্বর) টানেলের দক্ষিণ টিউবের নির্মাণ কাজের সমাপ্তি উদযাপন করবে সরকার। এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস চট্টগ্রামে উদযাপনের স্থান পরিদর্শন করেছেন।

সাংবাদিকদের আহমদ কায়কাউস বলেন, এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে টানেলের সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের মধ্যেই টানেলটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টানেলটি জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। টানেলটি চট্টগ্রামের যানজট পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি ঘটাবে ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে। বাংলাদেশের মানুষ পদ্মা সেতুর পর আরেকটি মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেলটি বাংলাদেশের গর্ব, মর্যাদা এবং একটি মেগা কাঠামো সম্পন্ন করার সক্ষমতার প্রতিফলন ঘটাবে। ‘এক নগর, দুই শহর’ নকশার ভিত্তিতে চীনের সাংহাই নগরীর মতো বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে নির্মাণ করার প্রকল্প নিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, টানেলের কারণে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্কে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কর্ণফুলী টানেল দিয়ে আনোয়ারা ক্রসিং হয়ে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি চাকায় গতি সঞ্চারিত হবে ও জীবনযাত্রার মান ও কর্মসংস্থান বাড়বে।

প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, টানেলের ভেতরের বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়েছে। শুধু বৈদ্যুতিক লাইন ও কিছু কারিগরি কাজ বাকি আছে। প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দ্রুত কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, টানেলটি জিডিপিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ব্যাপক কর্মসংস্থান, পর্যটন ও শিল্পায়নের ফলে অর্থনীতি একটি নতুন মাত্রা পাবে।

হারুনুর রশীদ বলেন, টানেলের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগর, চট্টগ্রাম বন্দর এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত বিমানবন্দরের সঙ্গে একটি উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। পূর্বাঞ্চলের শিল্প কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য ও কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরে নিয়ে যেতে সময় ও খরচ কম লাগবে।

২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন ও ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।

টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড ও আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে।

মূল টানেলের দৈর্ঘ্য তিন দশমিক ৩২ কিমি। এতে দুটি টিউব রয়েছে। প্রতিটিতে দুটি লেন রয়েছে। এই দুটি টিউব তিনটি জংশনের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। এই ক্রস প্যাসেজগুলি জরুরি পরিস্থিতিতে অন্যান্য টিউবগুলিতে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হবে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য দুই দশমিক ৪৫ কিমি ও ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার।

মূল টানেলের পশ্চিম এবং পূর্ব দিকে একটি পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক পাঁচ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে সরকার।

আরএডি/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।