প্রাথমিক শিক্ষার হার বাড়লেও মান কমছে: ড দেবপ্রিয়

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:০৯ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২২
ফাইল ছবি

দেশব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষার হার বাড়লেও মান কমছে বলে মন্তব্য করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেছেন, এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে অনেকেই অর্থের অভাবে শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের যে উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে তা দিয়ে সমগ্র শিক্ষার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত নাগরিক নাগরিক প্ল্যাটফর্মের মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

উন্নয়ন কতখানি সুষমভাবে স্থানীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে তা বোঝার জন্য নাগরিক প্ল্যাটফর্ম সম্প্রতি উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে সাতটি নাগরিক পরামর্শ সভার আয়োজন করে। পরামর্শ সভাগুলো গত ৪ জুন রংপুরে, ২ জুলাই, খুলনায়, ৩১ জুলাইয়ে টাঙ্গাইল, ১৩ আগস্ট সিলেটে, ২৪ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে, ১ অক্টোবর রাঙ্গামাটিতে এবং ২ অক্টোবর চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ২৫টি জেলার ৫০০ এরও বেশি নাগরিক এ সভায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

স্থানীয় পর্যায়ে প্রাপ্ত এসব মতামত জাতীয়ভাবে উপস্থাপনের লক্ষ্যে এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।

সভার সার-সংক্ষেপ তুলে ধরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, স্বাস্থ্য খাতে মানের উন্নয়ন হচ্ছে না। যদিও বড় বড় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হচ্ছে, হাসপাতাল হচ্ছে, কিন্তু সেখানে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে না। স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন জায়গায় সুপেয় পানির অভাব এবং পয়ঃনিষ্কাশনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। এছাড়াও সামাজিক সুরক্ষার পরিমাণ পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া সঠিক পরিবহন ব্যবস্থার অভাবের ফলে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণও ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে নারী, যুব ও প্রবীণরা নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সামাজিক এবং পারিবারিক মণ্ডলে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে যুবকরা সমাজ থেকে বিযুক্ত হচ্ছে যার প্রধান কারণ কর্মসংস্থানের অভাব হলেও এর পাশাপাশি আছে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভ্রান্তি, মাদকাসক্তি, মানসিক বিষণ্ণতা, উগ্রবাদের প্রতি আকর্ষণ ইত্যাদি। প্রবীণদের জন্য সুযোগের অভাবের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।

‘রাষ্ট্রীয়ভাবে বা ব্যক্তি খাতে তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাপনা নেই। এছাড়াও নীতিনির্ধারণে তাদের প্রতি মনোযোগের অভাব রয়েছে। স্থানীয় পর্যায় থেকে শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধীদের কথাও উঠে এসেছে যারা সমাজে এমনকি পরিবারেও নিগৃহীত হয়। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী প্রতি ঘৃণামূলক আচরণের কথা স্থানীয় আলোচনায় উঠে এসেছে।’

স্থানীয় পর্যায় থেকে কর্মক্ষেত্রে বিষয়ে তিনটি পেশাজীবীদের কথা এসেছে মন্তব্য করেন ড. দেবপ্রিয় বলেন, এগুলো হলো- কৃষকদের অর্থনৈতিক ক্ষতি, সীমাবদ্ধ ব্যাংক ঋণ এবং বীজ ও পণ্যের বাজারে প্রবেশাধিকারে প্রতিবন্ধকতার কথা।

অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ে আক্রান্ত জনগোষ্ঠী, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার মাসগুলোতে জেলেদের চাল বরাদ্দের অপ্রতুলতা, চা শ্রমিকদের মজুরি ও জীবিকার সমস্যা এবং অভ্যন্তরীণ ও বিদেশফেরত অভিবাসীদের কর্মসংস্থানের সুযোগে সমস্যার কথাও উপস্থাপনায় উঠে আসে।

দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশ ক্রমাগতভাবেই উন্নয়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই জাতীয় উন্নয়ন আলেখ্যের স্থানীয় ভিত্তিটা কতখানি মজবুত? বিশেষ করে যারা প্রথাগতভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষ আছে তাদের ভূমিকা কতখানি? তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিনিধিদের সমস্যা অনুধাবনের মাধ্যমে তথ্য উন্মোচন করার লক্ষ্যে সাতটি অঞ্চলে নাগরিক পরামর্শ সভার আয়োজন করা হয়েছে। যেখান থেকে উঠে আসা তথ্যগুলো জাতীয় উন্নয়নকে প্রভাবিত করেছে।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আজ তৃণমূলের বক্তব্য উপস্থাপন হয়েছে, যেখানে দুইটি বিষয় উঠে এসেছে। তা হলো বণ্টনের দিক ও আকাঙ্ক্ষার দিক। উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে গড়ের সমীকরণ আমাদের সমাজে আছে সেখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। এই গড়ের কাছাকাছি স্থানীয় মানুষদের তখনই আনা সম্ভব যদি ইতিবাচক বৈষম্যমূলক আলোচনা হয় এবং তা হতে হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে।

তিনি আরও বলেন, আর আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান যে উন্নয়ন হয়েছে সেখানের দৃশ্যের সঙ্গে মানের ব্যাপারেও গুরুত্ব দিতে হবে। এ জায়গাগুলো অর্জনের জন্য সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের নতুন সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে সুশাসন ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এমওএস/আরএডি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।