ইমেজ মুক্তা চাষে বিএফআরআইয়ের সফলতা
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনাময় একটি খাত হয়ে উঠতে পারে ঝিনুক শিল্প। ঝিনুক নিয়ে কারবারে স্বল্প মেয়াদে বেশি মুনাফা অর্জন সম্ভব না হলেও দীর্ঘমেয়াদে এর উচ্চতা অন্য অনেক কিছুকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। ঝিনুককে কাজে লাগানোও সম্ভব বিভিন্নভাবে।
ঝিনুক থেকে পাওয়া যায় মুক্তা। এছাড়াও চুন, নানা ধরনের অলঙ্কার, শোপিস ইত্যাদির মাধ্যমেও ঝিনুক দিয়ে ব্যবসা লাভজনক খাতে পরিণত করা সম্ভব। এছাড়া ঝিনুকের মাংস মৎস্য ও পোল্ট্রি ফার্মেও ব্যবহৃত হয়। ঝিনুক লোনা ও স্বাদু উভয় পানিতে হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বহুকাল থেকেই মূল্যবান মুক্তা আহরণের জন্য ঝিনুক চাষ করে আসছে। মুক্তা উৎপাদনে চীন, জাপান শীর্ষস্থান দখল করে আছে বহুদিন ধরে। এছাড়া ভারত, ফিলিপাইন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, কানাডা, স্পেন, ইতালি ইত্যাদি দেশেও ব্যাপক হারে ঝিনুক চাষ হয়ে থাকে। ইউরোপ-আমেরিকায় খাবার হিসেবেও ঝিনুকের জনপ্রিয়তা কম নয়। ঝিনুক থেকে প্রাপ্ত মুক্তা কেবল সৌখিনতা ও আভিজাত্যেরই প্রতীক নয়, এই মুক্তা বেশ কিছু জটিল রোগের চিকিৎসাতেও ব্যবহৃত হয়। 
ঝিনুক শিল্প নিয়ে বিপুল আর্থিক সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশে এখনো তেমন একটা ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি এ শিল্প। তবে সম্প্রতি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) দেশে প্রথমবারের মতো ইমেজ (প্রতিচ্ছবি) মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছে। মিঠাপানির ঝিনুক থেকে পাখি, মাছ, নৌকাসহ বিভিন্ন বস্তুর নকশার দৃষ্টিনন্দন ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে তাদের এই সফলতা। উদ্যোক্তা ও গ্রামীণ পর্যায়ে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক।
বিএফআরআই মুক্তা বিজ্ঞানী ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান, বাংলাদেশে মিঠাপানির ঝিনুকের মধ্যে দুই প্রজাতির ঝিনুক ইমেজ মুক্তা উৎপাদনে অধিকতর উপযোগী। ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় আকৃতির স্বাস্থ্যবান ঝিনুক বাছাই করা হয়। পরে চ্যাপ্টা আকৃতির বস্তুর (মোম, প্লাষ্টিক, স্টিল) অবয়ব ঝিনুকে স্থাপন করে ঝিনুক পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয়। ঝিনুক পুকুরে ছাড়ার ৭-৮ মাস পরই ওই নকশার উপর ঝিনুকের আঠালো রস পড়ে হুবহু ওই আকৃতির ইমেজ মুক্তা উৎপাদিত হয়। 
দেশে ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের সম্ভাবনার বিষয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, আমাদের জলবায়ু ও পরিবেশ ইমেজ মুক্তা উৎপাদনের উপযোগী। মাছের সাথে ঝিনুক চাষ করলে কোনো খরচ ছাড়াই খামারিরা বেশি আয় করতে পারবেন।
এ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক মোহাম্মদ জাহের বলেন, আমাদের দেশে মুক্তা উৎপাদনকারী ঝিনুকের আকার ছোট হওয়ায় ভিয়েতনাম থেকে অপেক্ষাকৃত বড় ঝিনুক সংগ্রহের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। তবে ইতোমধ্যেই দেশীয় ঝিনুক থেকে আমরা ইমেজ মুক্তা চাষে সফলতা পেয়েছি। উদ্যোক্তা ও গ্রামীণ পর্যায়ে এ প্রযুক্তি ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হলে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও ব্যাপক সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
এনএফ/পিআর