জামায়াত-শিবির যেন পুলিশে ঢুকতে না পারে : প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশিত: ০১:১৫ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুলিশ বাহিনীর নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগুন সন্ত্রাসীদের হাত থেকে পুলিশও রক্ষা পায়নি। পুলিশের ১৮/১৯ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ বাহিনীতে যেন জামায়াত-শিবিরের লোক ঢুকতে না পারে, সেজন্য তাদেরই সচেতন থাকতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আগুন সন্ত্রাসীরা যেন শৃঙ্খলিত একটি বাহিনীতেও ঢুকতে না পারে সে ব্যাপারে পুলিশের কর্মকর্তাদের সর্তক থাকতে হবে। আশাকরি তারা সচেতন হবেন। এছাড়া পুলিশ বাহিনীতে সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের নিয়োগ বন্ধে সংসদ সদস্যদেরও সহযোগিতা চাই।

জাতীয় সংসদে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (বিটিএফ)-এর চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রশ্নকর্তা সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যকে বলতে চাই নিজ নিজ এলাকায় যারা এই ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলো তারা (সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতরা) পুলিশ বাহিনীতে ঢুকে থাকলে, সে খবর আমি মনে করি গোয়েন্দা সংস্থার হাতে দিলে নিশ্চয়ই তারা (গোয়েন্দা সংস্থা) সে বিষয়টা যাচাই করে দেখবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

তিনি আরো বলেন, এখানে আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না। কিন্তু এটা দেখা উচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যারা লিপ্ত এবং যারা এই ধরণের অগ্নিসন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তারা যেন একটা সুশৃঙ্খল বাহিনীতে আসতে না পারে-এটা দেখার দায়িত্ব সেই পুলিশ বাহিনীর। আমি আশা করি, এটা তারা (পুলিশ) দেখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশে জনসংখ্যা গ্রহণের জন্য একটা নীতি মালা আছে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩-১৪ নির্বাচন ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এরপর ২০১৫`র জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত যে তাণ্ডব চালিয়েছিলো। একের পর এক মানুষ হত্যা করা, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, সিএনজি, প্রাইভেট গাড়ি এমন কি রিকশা-অটোরিকশাও তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এভাবে তারা মানুষ পুড়িয়েছে, মেরেছে।

তিনি বলেন, একই সঙ্গে পুলিশও কিন্তু রেহাই পায়নি। পুলিশকেও কিন্তু তারা মেরেছে, পুড়িয়েছে, আগুন দিয়ে তাদেরকে (পুলিশ) মারার চেষ্টা করেছে। অনেককেই জ্বালিয়ে দিয়েছে, হত্যা করেছে। পুলিশও নির্মামভাবে হত্যার শিকার হয়েছে।  

শেখ হাসিনা বলেন, সেই পুলিশ বাহিনীতে যখন লোক গ্রহণ করবে, এখানে দায়িত্বে থাকে পুলিশ বাহিনীর অফিসাররা। আমি মনে করি, তাদের (পুলিশ কর্মকর্তা) এই কথাগুলো স্মরণে থাকা উচিত যে এই জামায়াত-বিএনপি তাদের (পুলিশ) উপর কি অত্যাচার করেছে। তাদের প্রায় ১৮/১৯ জনের মতো সদস্যকে হত্যা করেছে। এই বিষয়টি মনে রেখেও তো নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের সর্তক থাকা প্রয়োজন।

‘জয় কি করবে তার উপর নির্ভর করে’ :
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের (ময়মনসিংহ-৮) সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জয় (সজীব ওয়াজেদ জয়) ভবিষ্যতে কি করবে এটা সম্পূর্ণ তার উপর নির্ভর করে। সে কিন্তু আমাদের সহযোগিতা করছে। আজকে যে ডিজটাল বাংলাদেশ করছি সেখানে ডিজিটাল শব্দটি শুরু করে যতটুকু অর্জন তার (সজীব ওয়াজেদ জয়) পরামর্শ মতেই হচ্ছে’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। তাদেরকে একটি কথাও বলেছি। তোমাদের কোনো সম্পদ দিতে পারব না। তোমাদের একটি বড় সম্পদ যত পারো শিক্ষা গ্রহণ কর। ওটাই তোমাদের জীবন-জীবিকা তৈরি করে দেবে। আর তাদের  ভবিষ্যৎ তারা নিজেরাই ঠিক করবে। এ দায়িত্ব তাদের নিজের উপরেই ছেড়ে দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, ‘সে (জয়) কিন্তু জনগণের জন্য সেবা ও সাহায্য করছে। সে কিন্তু কোনো কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে আসেনি। সে যতটুকু পারছে দিচ্ছে। এটা তাকে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানের প্রেরণাই উদ্দীপ্ত করছে দেশের সেবা করতে। আর তার পথ সে নিজে দেখবে।’

ফখরুল ইমাম (ময়মনসিংহ-৮) সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘জয় বাংলা’ দুটি শব্দ এবং ‘প্রথম’ শব্দটি নিয়ে আপনি কি চিন্তা ভাবনা করছেন? পাশাপাশি পুরুষের অধিকার নিয়ে উনি কি চিন্তাভাবনা করছেন? প্রশ্নকর্তার এসব প্রশ্ন শুনে অধিবেশনের সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আপনার প্রশ্নতো সম্পূরক নয়।’ পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনার ঘরে উনি যে উনার বউকে এত ভয় পান এটা আমরা জানতাম না। তবে ভাগ্য ভাল উনি উনার ঘরে পুলিশি পাহারার কথা বলেন নাই। এসময় সংসদে হাস্যরোলের সৃষ্টি হয়। ফখরুল ইমামকেও হাসতে দেখা যায়।

দেশে ও বিদেশে ১০ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে :
সিরাজুল ইসলাম মোল্লার (নরসিংদী-৩) লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদকে জানান, বর্তমান সরকারের আমলে ২০১১ অর্থবছর থেকে ১৫ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দেশে ও বিদেশে মিলে প্রায় ১০ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এত কর্মসংস্থান আর অতীতে কখনো হয়নি। সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে অর্থবছর’১১ হতে অর্থবছর’১৫ সময়ের মধ্যে ২ দশমিক ৪৪ মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক বিদেশে যেতে পেরেছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সুদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। দেশের উন্নয়নের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক ভিত্তিক আর্থিক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৬ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশ। বছর শেষে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

এইচএস/একে/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।