সমস্যায় জর্জরিত নওগাঁর প্রতিবন্ধী স্কুলটি
নওগাঁর পোরশায় প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মোবারক হোসেন প্রতিবন্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ এখন নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিষ্ঠানটির উপর সরকারে দৃষ্টি না পড়ায় এখনো কোনো প্রকার সরকারি সহযোগিতা জোটেনি। এমনকি শিক্ষকরাও পান না কোনো বেতন-ভাতা।
গত চার বছর ধরে ২০৮ জন বুদ্ধি, দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণসহ সকল ধরনের প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ও সেবা দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। তাই দ্রুত সরকারি সহযোগিতা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভাগীয় শহর রাজশাহীর একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৩ সালে পোরশা উপজেলার নিতপুর কপালির মোড়ে স্থাপন করা হয় মোবারক হোসেন প্রতিবন্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়। নিতপুর মাস্টার পাড়ার মৃত-মোবারক হোসেনের ছেলে মওদুদ আহম্মেদের উদ্যোগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
মওদুদ আহম্মেদ কয়েক বছর আগে পোরশা উপজেলায় একটি প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার চিন্তা ভাবনা থেকে ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ জমির উপর প্রতিবন্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ঘরের মধ্যে দুটি ক্লাশ ও সেবা রুম, একটি অফিস রুম তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকসহ ১৬ জন শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষক, দুইজন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক, চারজন সহকারী শিক্ষিকা, চারজন জুনিয়র শিক্ষক, একজন অফিস সহকারী, দুইজন শিক্ষা সহকারী, একজন এমএলএসএস ও একজন ভ্যান চালক এবং এ জন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। এ সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের রাজশাহীর ওই সংস্থা প্রশিক্ষণ ও সনদপত্র প্রদান করেছে। পাঁচ বছর থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধীদের এখানে ভর্তি করা হয়।
গত তিন বছর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে বুদ্ধি, দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণসহ ১২ ধরনের ২০৪ জন প্রতিবন্ধীদের ভর্তি করে শিক্ষা ও সেবা দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও এতিম চার শিশুও ভর্তি আছে এখানে। বর্তমানে এখানে ছেলে প্রতিবন্ধী ১৩০ জন ও মেয়ে প্রতিবন্ধী ৭৪ জন ভর্তি আছে।
এছাড়াও স্থানীয় এক ব্যক্তির দান করা চার্জার ভ্যানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৬০ জন প্রতিবন্ধী এখানে শিক্ষা ও সেবা নিতে আসে। নাম মাত্র ভর্তি ফি নেয়া হলেও কোনো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক বা বাৎসরিক খরচ নেয়া হয় না। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত স্কুল খোলা রেখে শিক্ষা ও সেবা দেয়া হয়ে থাকে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মওদুদ আহম্মেদ জানান, প্রতিবন্ধী স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করার সময় থেকে এলাকাবাসীর ব্যাপক অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা পেয়ে আসছি। বর্তমানে স্কুল শিক্ষক কর্মচারীরা কোনো বেতন-ভাতা পান না। নিজ থেকেই শিক্ষকরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কত দিন এভাবে সেবা দিতে পারবো তা বলতে পারি না। তবে সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে আরো সুবিধা হতো।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের স্কুলটিতে সাউন্ড সিস্টেম ও অনেক খেলনা এবং বিস্কুট প্রয়োজন। এছাড়াও ক্লাশ রুমের দরকার। পর্যাপ্ত ক্লাশ রুম না থাকায় অধিকাংশ সময় খোলা আকাশের নিচে ক্লাশ নিতে হয়। বৃষ্টির সময় পাঠদানে তাদের ব্যাপক সমস্যা হয়। ছোট একটি মাঠেরও বেহাল অবস্থা।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কক্ষ, যাতায়াত ব্যবস্থাসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এই মহতি উদ্যোগকে আরও বড় পরিসরে নেয়ার জন্যে প্রশাসনের কাছে সকল সহযোগিতার দাবি জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দীন শামীম জানান, ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার মহোদয় উপজেলা পরিষদ থেকে বেশ কিছু অর্থের অনুমোদন করেছেন। সেই অর্থ দিয়ে দুটি ঘর নির্মাণ, স্কুলমাঠ ভরাট, চলাচলের জন্যে গাড়ি কিনে দেয়াসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান করা হবে।
জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, এই প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা থাকবে।
আব্বাস আলী/এফএ/এসএস/আরআইপি