বালিশ চাপা দিয়ে দুই শিশুকে হত্যা করে ঘাতক ছোটন


প্রকাশিত: ০২:৩৫ পিএম, ০১ মার্চ ২০১৬

রেখা আক্তার (সৎ মা) আমাদের বাসায় ১০ বছর আগে ভাড়া থাকতো, তাকে আমরা বোন বলে ডাকতাম, কিন্তু আমার বাবার সঙ্গে সে সখ্যতা করে তাকে বিয়ে করে, বিয়ের পর থেকে এ নিয়ে সংসারে কলহ দেখা দেয়। আমার বোনদের উপর চালানো হতো নির্যাতন, শেষ পর্যায়ে যখন জানতে পারি পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে- তখনই দুই সৎ ভাইকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যায়। এরপর দুই ভাইকে বালিশ চাপা ও গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করি।

মঙ্গলবার বিকেলে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে এসব কথা জানায় ঢাকার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মো. আল শফিউল ইসলাম ছোটন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর দক্ষিণ মডেল থানার এসআই আজিজুল হক জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা থেকে ছোটনকে গ্রেফতারের পর মঙ্গলবার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে মিডিয়ার সামনে হাজির করা হয়। জবানবন্দির পর বিকেলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।  

জানা যায়, গত শনিবার কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ রসুলপুর (ঢুলিপাড়া) এলাকায় মেহেদী হাসান জয় ও মেজবাউল হক মনি নামে দুই শিশুর হত্যা মামলার একমাত্র আসামি মো. আল সফিউল ইসলাম ছোটনকে জেলা ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে।

ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ ও এসআই সহিদুল ইসলামসহ পুলিশের একটি টিম মোবাইল ট্র্যাকিং করে সোমবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ টুইন টাওয়ারের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এরপর মঙ্গলবার ভোরে তাকে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। মঙ্গলবার তাকে কুমিল্লার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন জানান, জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক ছোটন তার দুই সৎ ভাইকে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। ছোটন পুলিশকে আরো জানায়, বাবা আবুল কালাম প্রায় ১০ বছর আগে তার মা রোকেয়া বেগমকে রেখে রেখা বেগমকে বিয়ে করে। পরবর্তীতে বাবার পরের এ সংসারে নিহত জয় ও মনির জন্মের পর থেকে পিতা আবুল কালাম এবং সৎ মা রেখা বেগম তাদের (ছোটন, তার মা ও বোনদের) প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে ও লেখাপড়ার খরচ কমিয়ে দেয়। এরপর ছোট বোনকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে।

Comilla
সর্বশেষ পৈত্রিক সম্পত্তি হতে তাদের বঞ্চিত করবে মর্মে জানতে পারে। পুঞ্জিভূত এসব ক্ষোভ থেকেই মূলত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোটন তার দুই সৎ ভাই জয় ও মনিকে হত্যা করে আত্মগোপন করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আজিজুল হক জানান, বিকেলে গ্রেফতারকৃত ছোটন কুমিল্লার ৯নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। ছোটন একাই দুই সৎ ভাইকে বালিশ চাপা দিয়ে ও গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

জবানবন্দিতে ছোটন জানায়, সৎ মা রেখা আক্তার তাদের বাসায় ভাড়া থাকতো, আমরা তাকে (ছোটন) বোন বলে ডাকতাম, কিন্তু পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সে আমার বাবাকে বিয়ে করে। হত্যার বিষয়ে ছোটন আরো জানায়, তার বাবা ও সৎ মা জেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার সুযোগে দুই সৎ ভাইকে একা পেয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।

দুপুরে চকলেট ও আইসক্রিম কেনার জন্য জয়কে দোকানে পাঠিয়ে প্রথমে মনিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার করা হয়। পরে জয় বাসায় ফিরলে তাকেও বিছানায় ঘুমানোর কথা বলে একই কায়দার হত্যা করা হয়। এরপর পরে বাসার বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ঢাকায় চলে যায়।

উল্লেখ্য, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে গত শনিবার বিকেলে কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ রসুলপুর ঢুলিপাড়ার আবুল কালামের ছেলে ছোটন তার দুই সৎ ভাইকে হত্যা করে। পরে তাদের মরদেহ ঘরের খাটের উপর রেখে ঘরের দরজায় বদ্ধ করে পালিয়ে যায়।

কামাল উদ্দিন/এআরএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।