জেনেভায় আইনমন্ত্রী

শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ-জীবনমান উন্নয়ন করছে সরকার

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:১২ এএম, ২২ মার্চ ২০২৩

শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও জীবনমান উন্নয়নে সরকার কাজ করছে এবং এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডির ৩৪৭তম অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা জানান। সংস্থাটির বিভিন্ন শ্রম-মানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ ও জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত নানামুখী উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

গত ১৩ মার্চ থেকে শুরু হওয়া আইএলওর চলমান অধিবেশনে বাংলাদেশের ওপর আলোচনায় বিশ্বব্যাপী শ্রমিকের জন্য নিরাপদ ও উন্নততর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক কনভেনশনগুলোর আলোকে বিভিন্ন দেশের সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।

অধিবেশনে আইনমন্ত্রী বলেন, আইএলও-তে ২০২১ সালে সরকারের উপস্থাপিত রোডম্যাপের আলোকে সরকার বাংলাদেশ লেবার রুলস সংশোধন করেছে এবং ইপিজেড লেবার রুলস প্রণয়ন করেছে। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সব অংশীদারদের মতামত সংকলন করার কাজ চলছে। এরই মধ্যে সাতটি ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

একটি গণতান্ত্রিক দেশে আইন প্রণয়ন সব অংশীদারদের মতামতের ভিত্তিতে হয় বিধায় প্রণয়ন প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ উল্লেখ করে মন্ত্রী এক্ষেত্রে সবার অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালে দেশের কারখানাগুলোতে ৩৯ হাজার পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২৬ শতাংশ বেশি। রোডম্যাপ প্রণয়নের মাত্র দেড় বছরে ৮১ জন নতুন কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ করা হয়েছে, যা চলতি বছরে আরও বাড়ানো হবে। শ্রমিকদের অভিযোগের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে তিনটি নতুন শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ট্রেড ইউনিয়নের অধিকারসহ অন্যান্য শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের ৫০টি অভিযোগের মধ্যে ৪১টি অভিযোগের বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৯টি অভিযোগ বিচারাধীন। এছাড়াও সালিশির জন্য প্রাপ্ত অভিযোগের ৯৭ শতাংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। শ্রমিকদের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ে এবং বাংলাদেশে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে।

আনিসুল হক জানান, শ্রম মন্ত্রণালয়ের হেল্পলাইন ২০২২ সালের শেষ ছয় মাসে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহের ৯৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের হেল্পলাইনে পাওয়া অভিযোগের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে লেবার ইন্সপেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্লিকেশন (লিমা) প্রতিষ্ঠা এবং মাইগভ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন চালু করা হয়েছে বলে আনিসুল হক অধিবেশনে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, সরকারের ট্রেড ইউনিয়ন-বান্ধব নীতির ফলে গত ৯ বছরে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন নয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া রোডম্যাপের বাইরে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী আইন প্রণয়ন, এক লাখেরও বেশি শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ থেকে তুলে এনে উপযুক্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে কর্মক্ষেত্রে নারীদের হয়রানি রোধে কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আইনমন্ত্রী বলেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানাসহ দেশের শ্রমঘন সব খাতে বৈপ্লবিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। একটি জনবহুল দেশে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহের পাশাপাশি কোভিড মহামারি ও যুদ্ধের ফলে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আইনমন্ত্রী বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নিং বডির সদস্যরা শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং উন্নতর কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রসংসা করেন।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।