‘বারবার সামরিক শাসন স্বাধীনতাকে ম্লান করেছে’

সায়েম সাবু
সায়েম সাবু সায়েম সাবু , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৩৮ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২৩

আমির হোসেন আমু। প্রবীণ রাজনীতিক। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। রাজনীতি করেছেন বঙ্গবন্ধুর সহচার্যে থেকে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে স্বাধীনতার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। মতামত নিয়ে লিখেছেন সায়েম সাবু

জাগো নিউজ: মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর অন্যতম সহচারী। জীবনের এই পরিণত বয়সে এসে স্বাধীনতার মূল্যায়ন কীভাবে করবেন?

আমির হোসেন আমু: বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট ছিল। হাজার বছর ধরে এই প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। বিভিন্ন গোষ্ঠীর শোষণ আর শাসনে এ অঞ্চলের মানুষ উপর্যুপরি নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। সবশেষ পাকিস্তান আমলের ২৩ বছর ছিল বাঙালির অধিকার আদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।

আরও পড়ুন>> অরক্ষিত গল্লামারী বধ্যভূমি এখন মাদকের আখড়া

পাকিস্তানের শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু লড়াই শুরু করলেন। বাঙালি একটি আত্মমর্যাশীল জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করুক এবং স্বাধীনভাবে বাঁচুক তাই তিনি চেয়েছিলেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বাংলাদেশকে স্বাধীন করলাম বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।

বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেষ হাসিনা জাতির পিতার আশা পূরণের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বেই মানুষ স্বাধীনতার সত্যিকার তৃপ্তি পাচ্ছে।

আজ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে নিজেকে রাখতে পেরে সুখী-সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারছে। বিভিন্ন ভাতা দিয়ে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকল্পে বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গরিব-ভূমিহীন মানুষেরা আজ নিজের আবাসনে অবস্থান করতে পারছেন। লাখ লাখ ঘরহীন মানুষ সরকারি সহায়তায় ঘর পেয়েছেন। প্রতিবন্ধীরা ভাতা পেয়ে মানসম্পন্ন জীবনযাপন করতে পারছেন। এ ভাবনা তো অন্য কোনো সরকার আগে ভাবেনি।

আরও পড়ুন>> সুযোগ পেলেই যুদ্ধের গল্প শোনান যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজ

মানুষের স্বাধীনতার সঙ্গে মৌলিক পাঁচটি অধিকার নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ছাড়া মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা পায় না। সরকার এসব অধিকার নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে। সরকার এ প্রশ্নে মানুষের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে পারছে বলে আমি বিশ্বাস করি। তার মানে স্বাধীনতাযুদ্ধের যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

জাগো নিউজ: আপনি নিজে স্বাধীনতা নিয়ে তৃপ্ত কি না?

আমির হোসেন আমু: স্বাধীনতার পর আমাদের বড় অর্জন ছিল সংবিধান রচনা, যেখানে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পবিত্র ধারা যুক্ত হয় পাতায় পাতায়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রি সব বদলে দেয়। একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক স্বৈরশাসক প্রতিষ্ঠা পায়। এর মধ্য দিয়েই মানুষের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়। আবারও পাকিস্তানি ভাবধারায় রাষ্ট্র পরিচালিত হতে থাকে।

আরও পড়ুন>> মুক্তিযুদ্ধে চা-শ্রমিকরা যেভাবে অবদান রাখেন

বঙ্গবন্ধুর কন্যা সরকারপ্রধান হওয়ার মধ্য ‍দিয়ে আমরা আবারও মৌলিক ধারায় ফিরতে সক্ষম হয়েছি এবং আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেতে শুরু করেছি। আমরা স্বাধীনতার মূল স্তম্ভগুলো প্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছি। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।

তবে এ-ও ঠিক যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কয়েক দশক পিছিয়ে গেছে। ওই হত্যাকাণ্ড না ঘটলে আমরা এতদিন উন্নত দেশের কাছাকাছি যেতে পারতাম। আমাদের আক্ষেপ ঠিক এখানেই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই স্বাধীনতার শূন্যতা তৈরি করা হয়েছে। পাকিস্তানি ধারায় বারবার সামরিক শাসন স্বাধীনতাকে ম্লান করেছে।

জাগো নিউজ: আর কোনো আক্ষেপ আছে কি না?

আমির হোসেন আমু: না। আমার আর কোনো আক্ষেপ নেই। দেশ ভালো চলছে। মানুষ তার অধিকার নিয়ে সন্তুষ্ট বলে মনে করি।

জাগো নিউজ: নির্বাচন, ভোট ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন আছে। গণতান্ত্রিক যাত্রায় কোথায় যেতে পারলাম?

আমির হোসেন আমু: একটি দেশ বা সমাজে রাতারাতি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় না। এজন্য লড়াই করতে হয়, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। স্বাধীনতার পরপরই তো আমাদের ঠেকতে হয়েছে। ১৯৭৫ সালের পর দেশ কোথায় গিয়েছিল, তা তো আমলে নিতে হবে।

এখন অন্য রাজনৈতিক দলগুলো যদি দায়িত্বশীল আচরণ প্রকাশ না করে, তাহলে তো গণতান্ত্রিক পথ মসৃণ হয় না।

জাগো নিউজ: এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগেরও দায় আছে কি না?

আমির হোসেন আমু: আওয়ামী লীগ তার দায়িত্ব পালন করে চলছে। অন্যের ব্যর্থতার দায়িত্ব আমরা নিতে পারি না। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের ভাত আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জন্ম নিয়েছে। সেই লড়াই এখনো অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগই মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে।

এএসএস/এএসএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।