‘স্বশিক্ষিত’ জায়েদা দেশের দ্বিতীয় নারী সিটি মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৪০ এএম, ২৬ মে ২০২৩
ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে জায়েদা খাতুন/ছবি: সংগৃহীত

বয়স ৭০ বছর। নির্বাচনী হলফনামায় পেশা ‘ব্যবসা’ লেখা হলেও মূলত তিনি গৃহিণী। শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’। এ ‘স্বশিক্ষিত’ জায়েদা খাতুনই বসতে যাচ্ছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ারে। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। টেবিল ঘড়ি প্রতীকে তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। সবকিছু ঠিক থাকলে জায়েদা খাতুন হতে যাচ্ছেন দেশের দ্বিতীয় নারী সিটি মেয়র।

দেশের প্রথম নারী সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন তিনি। ওই নির্বাচনে আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির তৈমুর আলম খন্দকার। আইভীর পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে সিটি করপোরেশনের মেয়র হচ্ছেন জায়েদা। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা খান।

নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী— জায়েদা খাতুনের জন্ম ১৯৬২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি। পিতার নাম সামছুল ইসলাম, মাতা আফাতুন। স্থায়ী ঠিকানা কানাইয়া, গাজীপুর সদর, গাজীপুর। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ‘স্বশিক্ষিত’। তার স্বামী মো. মিজানুর রহমান পাঁচ বছর আগে মার গেছেন। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য নেই।

হলফনামায় জায়েদার পেশা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে ‘ব্যবসা’, যা থেকে বছরে আয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৪৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ অর্থ দেখিয়েছেন ৩৫ লাখ টাকা। ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকা। অনারেবল টেক্সটাইল কম্পোজিট লিমিটেডে শেয়ারমূল্য দেখিয়েছেন দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন>> এক নজরে মেয়রপ্রার্থী আজমত উল্লা খান ও জায়েদা খাতুন 

স্বর্ণালংকার দেখানো হয়েছে ৩০ তোলা। ইলেকট্রনিকসামগ্রী এক লাখ ৫০ হাজার টাকার, আসবাবপত্র এক লাখ ২০ হাজার টাকার। স্থাবর সম্পদ কিংবা কোনো ঋণের কথা উল্লেখ নেই হলফনামায়।

ঘোষিত ফলাফলে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত জায়েদা খাতুনের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা। মনোনয়নপত্র দাখিল করার আগে জায়েদা খাতুনকে রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি। মূলত ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজকে ভিত্তি করেই তিনি রাজনীতিতে আসেন। জাহাঙ্গীর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকও। তিনি সিটি মেয়র হিসেবে পুরো মেয়াদকাল দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দল থেকে বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর। পরে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে মেয়র পদ থেকেও বরখাস্ত করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। পরে তাকে ক্ষমা করে দলে ফেরানো হলেও মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। এজন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহাঙ্গীর। তবে ঋণখেলাপি হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। হাইকোর্টে ছুটেও প্রার্থিতা ফেরত পাননি তিনি।

জাহাঙ্গীর নিজে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কেনার সময় তার মা জায়েদা খাতুনকে দিয়েও মনোনয়নপত্র তোলান। পরে তার প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষিত হলে মাকে নিয়ে মাঠে নামে তিনি। গাজীপুর সিটি নির্বাচন ও জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থী হওয়া নিয়ে জটিলতা এবং পরে তার মাকে প্রার্থী করা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ দিকে দৃষ্টি ছিল নগরবাসীরও।

দলের (আওয়ামী লীগ) মনোনয়ন না পাওয়া, নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারার পর জাহাঙ্গীর তার মাকে প্রার্থী করায় ‘কিছুটা সহানুভূতিও’ পেয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সিটি নির্বাচনে বাজিমাত করেছেন জাহাঙ্গীরের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন।

জায়েদা খাতুনের ৯ দফা ইশতেহার
সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর গাজীপুর মহানগরের উন্নয়ণ ও নগরবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন জায়েদা খাতুন। তাতে তিনি নির্বাচিত হলে পাঁচ বছরের জন্য হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফের প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা ও প্রণীত মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী অসমাপ্ত কাজ শেষ করার অঙ্গীকার করেন।

আরও পড়ুন>> জাহাঙ্গীরের মায়ের ৯ দফা ইশতেহার 

ইশতেহারে সিটি করপোরেশনের ৫৭টি ওয়ার্ডে রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন, সব ওয়ার্ডে প্রয়োজন অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি চলাচল উপযোগী রাস্তা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। সমগ্র গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় রাজেন্দ্রপুর থেকে শুরু করে টঙ্গী এবং আশুলিয়া হয়ে কোনাবাড়ী কাশিমপুর কাউলতিয়াকে সংযুক্ত করে আউটার রিংরোড নির্মাণের মাধ্যমে যানজট সমস্যার স্থায়ী সমাধান করার কথা জানান। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত সংযোগ ব্রিজ নির্মাণ করবো যাতায়াতের জন্য একাধিক বিকল্প রাস্তা ও সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দেন জায়েদা খাতুন।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলে। কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএমে ধীরগতি ও জটিলতা ছিল বলে অভিযোগ করেছেন ভোটাররা। তবে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

সকালের দিকে শহরের কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপচেপড়া ভিড় থাকলেও দুপুরের দিকে ভোটারদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুরুষ ভোটারের থেকে নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি ছিল।

নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন ও কাউন্সিলর পদে ২৪৮ জন এবং নারী কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ ও পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী। ১৮ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার।

এএএইচ/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।