টেকসই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন

স্থানীয় শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহ্বান

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৩ এএম, ২৬ মে ২০২৩

স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ প্রক্রিয়া টেকসই করার লক্ষ্যে রপ্তানি বহুমুখীকরণ ও স্থানীয় শিল্পের সম্ভাবনাকে পূর্ণ কাজে লাগানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয় চিংড়ি, পাট ও পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাকে পূর্ণরূপে কাজে লাগাতে সরকারের প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা প্রদানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মে) খুলনায় ‘লোকাল লেভেল স্টেকহোল্ডার্স কনসাল্টেশন অন ইনক্লুসিভ স্মুথ অ্যান্ড সটেইনেবল এলডিসি গ্রাজুয়েশন’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।

খুলনা জেলা প্রশাসন ও খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সহযোগিতায় ইআরডি’র সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) এ কর্মশালার আয়োজন করে।

খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ ২০১৮ ও ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের সব মানদণ্ড পূরণে সক্ষম হয়েছে। সিডিপি ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতির সময়সহ বাংলাদেশের উত্তরণ সুপারিশ করেছে। এরপর তা ইউনাইটেড নেশনস ইকোনোমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল থেকে অনুমোদিত হয়েছে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অনুমোদন করেছে। ফলে, পাঁচ বছর প্রস্তুতির সময় শেষে বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে।

উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করার লক্ষ্যে সরকার ভিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারি, বেসরকারি সংস্থার সমন্বয়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন সংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে। উত্তরণ সংক্রান্ত বিভিন্ন মৌলিক বিষয়সমূহ নিয়ে কাজ করবার জন্য জাতীয় কমিটির দিকনির্দেশনায় সাতটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী প্রস্তুতির সময়ে উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক অংশীদারসহ সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে মতবিনিময়ক্রমে একটি স্মুথ ট্রানজেশন স্ট্র্যাটিজি প্রণয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিবের নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের সহ-নেতৃত্বে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাব-কমিটি কাজ করছে।

উত্তরণের সম্ভাব্য প্রভাবসমূহ চিহ্নিতকরণ, প্রয়োজনীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি, উত্তরণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগসমূহকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং উক্ত ঐতিহাসিক অর্জনকে দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্যে ইআরডি’র অধীনে সাপোর্ট টু সাসটেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) শীর্ষক প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে।

এমতাবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণের প্রক্রিয়া এবং তার ফলে সৃষ্ট সুযোগ ও সম্ভাবনাসমূহ সম্পর্কে স্থানীয় পর্যায়ের অংশীদারদের অবহিত করা এবং উত্তরণ প্রক্রিয়াটি মসৃণ ও টেকসইকরণের প্রক্রিয়ায় তাদের আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে এসএসজিপি প্রকল্পের সহায়তায় উক্ত কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় বক্তব্য প্রদানকালে ইআরডি সচিব মিজ শরিফা খানএলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় শিল্পসমূহকে প্রস্তুত করার লক্ষ্যে উক্ত শিল্পসমূহের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ হ্রাসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মানবসম্পদ উন্নয়নের ওপর জোর দেন।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনকে টেকসইকরণের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডের ওপর আরও অধিক গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ। তিনি এসময় উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সার্বিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় কী প্রভাব পড়তে পারে বা নতুন কী সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে সে বিষয়ে স্থানীয় বেসরকারি খাত বিশেষত রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রতিনিধিদের মধ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান। কর্মশালায় প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. মুস্তফা সারোয়ার, খুলনা সিটি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক মো. আলমগীর কবির এবং খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এস এম নজরুল ইসলাম।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শরীফ আতিয়ার রহমান। স্থানীয় অংশীদারা খুলনা অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও মোংলা বন্দরের সম্ভাবনাকে পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।

কর্মশালায় বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ইআরডিও এসএসজিপি প্রকল্পের কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।

এমওএস/ইএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।