অবরোধে বুড়িগঙ্গায় যাত্রীর ভাটা, আয় কমেছে মাঝিদের
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে দ্বিতীয় দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। এতে সমর্থন দিয়েছে সরকারবিরোধী অন্য দলগুলো। বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় সড়কে সীমিত হয়েছে যানচলাচল। রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল খুবই কম। যাত্রী সংকটে বাস ছাড়তে পারছেন না বলে অভিযোগ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। অবরোধে শুধু বাসে নয়, যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর খেয়া পারাপারেও।
বুড়িগঙ্গা নদীর খেয়াঘাটে হাঁকডাক করেও যাত্রী পাচ্ছেন না মাঝিরা। যাত্রীর অপেক্ষায় ঘাটে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ৩০-৪০ মিনিট। কখনো আবার এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশিও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে মাঝিদের আয় কমে গেছে। এতে বর্তমান বাজারদরে ভরণপোষণ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
সোমবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামবাজার, ফরাশগঞ্জ ও ওয়াইজঘাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটে সারিসারি নৌকা নিয়ে বসে আছেন মাঝিরা। যাত্রীর আশায় হাঁকডাক দিচ্ছেন তারা। দুজন যাত্রী পেলেই নৌকায় তোলার প্রতিযোগিতা শুরু হয় মাঝিদের মধ্যে।
আরও পড়ুন>> বাইক চালিয়ে ৬ জনের সংসার চালাই, এভাবে চললে না খেয়ে থাকতে হবে
এদিন দেখা যায়, রাজধানীর সদরঘাট ও কেরানীগঞ্জ দুই পাড়েই যাত্রীর সংখ্যা কম দেখা গেছে। যাত্রী না পাওয়া মাঝিরা অলস সময় পার করছেন। তীব্র রোদের মধ্যে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছেন তারা।
মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী ও কলেজেগামী কিছু যাত্রী হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমে যায়। অবরোধে গাড়ি চলাচল করলেও মানুষ ভয়ে বের হয় না। শুধু আজ নয়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে যাত্রী সংকট শুরু হয়েছে বলে জানান তারা।
মাঝিরা বলেন, ‘বর্তমানে বাজারের যে অবস্থা, আমরা দিন আনি, দিন খাই। বাজারে প্রতিটি জিনিসের দাম বেশি। এখন দৈনিক যা আয় হয়, এই টাকায় থাকা-খাওয়া, বাসাভাড়া- কিছুই হয় না।’
তারা অভিযোগ করে বলেন, ‘শুধু হরতাল-অবরোধ নয়, ঢাকায় বিএনপির কোনো সমাবেশ হলেই আমাদের নৌকা চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে সেদিন আমাদের আর কোনো আয় থাকে না। সেদিন শুধু সন্ধ্যাবেলায় নৌকা চালাই। কিন্তু নৌকা মালিকদের প্রতিদিন ১০০ টাকা দিতে হয়।’
সদরঘাটের শ্যামবাজার ঘাট ও তেল খাটে ২৫ বছর ধরে নৌকা চলান মো. হানিফ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আয় কমে গেছে। আগে দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হতো। এখন দৈনিক ৩০০ টাকা নিয়ে বাসায় যাওয়া কষ্ট। বর্তমান বাজারে ৩০০ টাকা দিয়ে কী পাই! ঘরভাড়া দিতে পারি না, কিস্তির টাকা দিতে পারি না। অনেক কষ্টে আছি।’
আরও পড়ুন>> গুলিস্তানে বিকল্প পরিবহনের বাসে আগুন
একই সুরে কথা বলেন আরেক মাঝি মাজেদ সর্দার। তিনি বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ ছাড়া দুই-তিন মাস আগেও আমাদের দিনে ৮০০ টাকা আয় হতো। নৌকার মালিককে ১০০ টাকা দিয়ে আমাদের মোটামুটি খরচ থাকতো। কিন্তু এই অবরোধ-সমাবেশের কারণে আয় অনেক কমে গেছে। দিনে এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা তুলতে কষ্ট হয়ে যায়।’
ওমর ফারুক নামে এক মাঝি বলেন, ‘কোনো সময় দুই ঘণ্টায়ও যাত্রী পাই না, আবার কোনো সময় ২০ মিনিটেই পেয়ে যাই। এই আয় দিয়ে বাজার খরচ চালানো কষ্ট। এক কেজি পেঁয়াজ ১২০ টাকা, আলুর কেজি ৬০ টাকা। সবকিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু নৌকাভাড়া তো বাড়েনি।’
ওয়াইজঘাটের মাঝি শরিফ বলেন, ‘আমার নৌকা ছোট। ৩ থেকে ৪ জনের বেশি যাত্রী তোলার নিয়ম নেই। সে কারণে শুধু রিজার্ভ যাত্রী পারাপার করি। মাঝে মাঝে এক-দেড় ঘণ্টায়ও যাত্রী পাই না। আগে বিকেলে অনেক মানুষ ঘুরতে আসতো, এখন আসে না।’
রোববার (৬ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। এর আগে তিনদিনের অবরোধ পালন করে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী দলগুলো। এরও আগে একদিনের হরতাল পালন করে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধী দলগুলো।
আরএ/ইএ/জিকেএস